সংবিধানে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব
সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে সংবিধানে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ও নাগরিকের ডাটা সুরক্ষায় আইন করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সংগঠনটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।
সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা জাতিসংঘের আইটিইউ অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন থেকে স্বীকৃত। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের নাগরিকদের দৈনন্দিন সব কাজকর্মের অন্যতম মাধ্যম ইন্টারনেট। কিন্তু গত জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় প্রায় ১৩ দিন মোবাইল ইন্টারনেট ও ৮ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। এতে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। অর্থাৎ ইন্টারনেট এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি এখন স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকারও।
মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতির তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১১ সালে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতভাবে ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জাতিসংঘের স্বীকৃতি দেওয়ার পর আরও ৪২টি দেশ ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান সংস্কার ও সংশোধনের জন্য কমিশন গঠন করেছেন। আমাদের প্রত্যাশা এবার ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে যুক্ত করার পাশাপাশি নাগরিকের তথ্য অর্থাৎ ডাটা সুরক্ষা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। তাছাড়া এ খাত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররাও একমত হয়েছেন যে সংবিধানে ইন্টারনেটকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে নাগরিকের ডাটা সুরক্ষা নিশ্চিতও করতে হবে।
বিবৃতিতে তিনি কয়েকটি দাবি ও পরামর্শ তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে—
১. সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে মৌলিক অধিকারগুলোতে (১৫ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদ) টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটকে সকল নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২. বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, চিঠি পত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ে গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকবে। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনের যুগে চিঠিপত্রের প্রচলন কমে গেছে। যার জায়গায় যোগাযোগ রক্ষায় ইন্টারনেট ভিত্তিক মাধ্যমগুলো চালু হয়েছে। তাই ই-মেইল, অ্যাপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেটে নাগরিকের ডাটা ও তথ্যের নিশ্চয়তা একান্ত আবশ্যক। সেজন্য চিঠিপত্রের পাশাপাশি সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নাগরিকদের ডাটা সুরক্ষা অন্তর্ভুক্তি আবশ্যক।
পরামর্শগুলো হচ্ছে—
১. ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্তি করে সংবিধানে নতুন ধারা সংযোজন করা যেতে পারে।
২. ন্যায্য এবং সুলভমূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা চালু করা যেতে পারে।
৩. ডিজিটাল বিভাজন কমাতে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
৪. ডাটা সুরক্ষা ও গোপনীয়তা রক্ষায় সংবিধানে ডাটা সুরক্ষার ধারা সংযোজন করা যেতে পারে।
৫. সংবিধানের এ সংশোধনে জাতিসংঘের ইন্টারনেটকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডাটা প্রোটেকশন রেগুলেশনের মতো মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।
আরএইচটি/এসএসএইচ