নাগরিকদের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ চান ফরহাদ মজহার
ভারতের অতিরিক্ত আস্ফালনের উপযুক্ত জবাব দিতে দেশের সব নাগরিককে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা ভারতের এ দেশীয় স্থানীয় দালাল ছিলেন উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ১৫ বছর যুদ্ধ করেছে। দিল্লি আজকে হোক, কালকে হোক শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুনর্বাসিত করার পরিকল্পনা নিয়েই তাকে ভারতে জায়গা দিয়েছে। এটা জানার পরও আপনারা কেন আমাদের সৈনিকদের তৈরি করছেন না? কেন আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি না?
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, আজকে ভারত যে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, এটা নিছক প্রোপাগান্ডা নয়। এটা এক ধরনের সামরিক প্রস্তুতি। আপনারা দেখেছেন, মব চলে আসছে সীমান্তে। দল বেঁধে তারা সীমান্ত অতিক্রম করবে, এত বড় দুঃসাহস দেখাচ্ছে ভারত। আমরা তো চাই, এটিকে সরকারের যারা আছেন, তারা আমলে নেবেন। যাতে কোনোভাবেই ভারত অভ্যন্তরীণভাবে আমাদের বিশৃঙ্খল করতে না পারে, জনগণের ঐক্য ভাঙতে না পারে।
ফরহাদ মজহার বলেন, আজ আপনারা (বিজিবি) দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সৈনিকের যে সম্পর্ক তৈরি করেছেন, সেটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই ঘটনাটা তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, আমরা ইতোমধ্যে একটি বিপ্লব করেছি, যেটাকে আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থান বলছি। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা একটি গণঅভ্যুত্থান করেছি, জনগণ জেগেছে। আর জনগণ জাগার মনে হলো- দেশকে রক্ষার ক্ষেত্রে যিনি সৈনিক তিনি নাগরিক; যিনি নাগরিক, তিনিই কিন্তু সৈনিক।
সৈনিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রোপাগান্ডার দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। দেশের মধ্যে জনগণ বনাম সৈনিক যে দ্বন্দ্ব, এই দ্বন্দ্ব ৫ আগস্ট আমরা অতীতে ফেলে এসেছি। এখন একজন সৈনিক যেমন নাগরিক, তেমনি একজন নাগরিকও সৈনিক। যদি তা হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের দ্রুত বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা দরকার।
তিনি বলেন, পৃথিবীর সমস্ত ভূ-রাজনৈতিক বিন্যাস বদলাচ্ছে। একইসঙ্গে উপমহাদেশের বিন্যাস বদলাচ্ছে। আজকে চীন আমাদের চোখের সামনে এত বড় শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলো। ১৯৭৬ সালে এই চীন আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একই ছিল। তাহলে চীন পারলো, আমরা কেন পারছি না। কোথায় সমস্যা আমাদের?
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা এখনো পর্যন্ত রাষ্ট্র, সরকার, সৈনিক, নাগরিক কাকে বলে এই বিষয়ে আমাদের ধারণা অত্যন্ত অস্পষ্ট। যে কারণে আমরা দেখেছি, শেখ হাসিনার আমলে সব সময় জনগণকে সৈনিকদের বিরুদ্ধে এবং সৈনিকদের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতো। আজকে আমাদের সবার প্রতিশ্রুতি নেওয়া দরকার, এই পুরোনো পদ্ধতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অনেকে।
জেইউ/এমএসএ