ঢাকায় সম্প্রীতি সম্মেলন চান সব ধর্মের নেতারা
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও ইসলামসহ সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে ঢাকায় একটি বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতি সম্মেলন করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিভিন্ন ধর্মের নেতারা।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের নেতারা এই প্রস্তাব দেন।
আরও পড়ুন
বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমি গেটে ধর্মীয় নেতারা সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বৈঠক শেষে আল সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুফতি আহমদ উল্লাহ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ডাকে সাড়া দিয়ে ধর্মীয় নেতারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আজকে সমবেত হয়েছেন। আমরা বাংলাদেশের মানুষ কেমন আছি বিশেষ করে আমাদের অন্য ধর্মাবলম্বী যারা আছেন মুসলিম ছাড়া তারা কেমন আছেন, তাদের অবস্থা ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের সংখ্যালঘু ভাইয়েরা নিরাপদে আছেন এবং আরও নিরাপদ থাকবেন। তাদের নিরাপদ রাখার জন্য সরকার কাজ করছে। ধর্মীয় নেতৃত্ব কাজ করছে। আমরা মূলত এই বার্তাটি প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমরা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই মিলে এই মাটি ও দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। সেই জায়গা থেকে আমাদের কোনো ফাটল নেই।
তিনি আরও বলেন, আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের পর সারা বাংলাদেশের মুসলমানরা অত্যন্ত সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। আমরা কোনো প্রোপাগান্ডায় কান না দিয়ে সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি, এটাই সবার প্রত্যাশা।
রমনার সেন্ট মেরিজ ক্যাথেড্রালের ফাদার অলভার্ট রোজারিও জানান, গতকাল রাজনৈতিক দলগুলো এসে যে কথা বলে গেছে তার সঙ্গে আমরা একাত্মতা পোষণ করেছি। এই মুহূর্তে আমরা একটা স্পর্শকাতর সময় পার করছি। এই সময়ে আমাদের প্রধান কথা ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ইস্কনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে সেই ক্ষত দূর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেন এমন একটা আয়োজন করি যাতে সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে যে বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে আছে, তারা মিলেমিশে থাকে, তারা একসঙ্গে পথ চলে। আমাদের অ্যাডভোকেট মারা যাওয়ার ঘটনায় দেশের মানুষ অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। এরপরও ভারতের কিছু মিডিয়া উসকানিমূলক সংবাদ প্রচার করেছে, যার বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। বারবার আমাদের সম্প্রীতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আরেকটা বিষয় জোর দিয়ে বলেছি যে, আমাদের ইস্কনের যে ভাই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, আইনে যদি তার মুক্তির পথ খোলা থাকে তাহলে জামিনের বিষয়টা যেন বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিক্ষু সুনন্দ প্রিয় বলেন, দীর্ঘ সময় আমরা আলাপ করেছি। আমরা বলেছি দেশে যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকে। আমরা যেন মিলেমিশে থাকতে পারি। এটা আমাদের ঐতিহ্য। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কথা মন দিয়ে শুনেছেন।
রমনা হরিচাঁদ মন্দিরের সহ-সম্পাদক অবিনাশ মিত্র বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশে আছি। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। কিন্তু বিভেদটা কোথায়? যারা বিভেদ তৈরি করছে, তারা বিদেশে বসে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন। তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করবে, এটা আমরা চাই না।
গারো পুরোহিত জনসন ম্যুরি থামাল বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। যে মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের আমরা প্রতিরোধ করব। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। এই সরকারকে আমরা সহযোগিতা করব।
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সম্প্রীত সম্মেলনের প্রস্তাবের বিষয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, এটা প্রস্তাবনা। এ বিষয়টা উপদেষ্টা পরিষদ খতিয়ে দেখবে। দেশ ও জনগণের ভালোর জন্য যেকোনো উদ্যোগ নিতে রাজি আছি। সেটা করে যাব।
এনএম/এমজে