মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে বিচারের মুখোমুখি হবেন বাদী : আইজিপি
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ৫ আগস্টের পরে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা মামলা করে থাকেন, জেনেশুনে জীবিত মানুষকে মৃত বলে মিথ্যা মামলা করে থাকেন, তাহলে আইন-বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২১১ ধারা অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি হতে হবে সেই বাদীকে। এটাই আমাদের অনুসরণ করা উচিত। আমরা সেটাই চেষ্টা করব।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় পুলিশ সদর দপ্তরের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া সূত্রে জানতে পারছি, যারা হত্যার শিকার হয়েছিলেন তাদের কেউ কেউ জীবিত ফিরে আসছেন। সেক্ষেত্রে দায়ের হওয়া হত্যা মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করবেন?
এব্যাপারে আইজিপি বলেন, মামলায় বলা হয়েছে মারা গেছেন। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে মারা যাননি। এক্ষেত্রে বাদী যদি না জেনে, না বুঝে মামলা করে থাকেন তাহলে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ আসবে না। সেই মামলায় শুধু ফাইনাল পুলিশ রিপোর্টই হবে। বাদীর বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় প্রসিকিউশন হবে না। কিন্তু যদি ইচ্ছাকৃত বা উদ্দেশ্যমূলক মামলা করে থাকেন তাহলে আইনে বলা আছে যে, জেনেশুনে কেন জীবিত মানুষকে মৃত বলে মিথ্যা মামলা করলেন? এক্ষেত্রে ওই ২১১ ধারায় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বাদীকেই। এটাই আমাদের অনুসরণ করা উচিত। আমরা সেটাই চেষ্টা করব।
জঙ্গি কার্যক্রমে যারা জড়িত বলে বলা হয়েছিল তাদের অনেকে জামিন পেয়েছেন। তারা আসলে জঙ্গি কি-না, যেটি প্রমাণিত হয়নি সেটির সূত্র ধরে কীভাবে তাদের আখ্যা দেবেন? এ বিষয়ে আইজিপি বলেন, আদালত যদি কাউকে খালাস দিয়ে থাকে সেখানে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। আদালতের রায়ই তো চূড়ান্ত, আমরা যাই বলি না কেন, শ্রদ্ধা করতে হবে।
জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ আনসার আল ইসলামের নেতৃত্বদানকারী সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। পুলিশের খাতায় জিয়া মোস্ট ওয়ান্টেড। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। সেই জায়গায় আপনারা আছেন কিনা? তিনি কি এখনো ফেরারি, তিনি কি এখনো শীর্ষ জঙ্গি কিনা? তাকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেবেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপির হয়ে উত্তর দেন পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন ও ক্রাইম) রেজাউল করিম। তিনি বলেন, তার লিগ্যাল স্ট্যাটাস আগের মতো। কারণ তিনি কোনো মামলা থেকে খালাস পাননি। তিনি যদি খালাস পান তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি তিনি কনভিকটেড হন তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা। আপাতত এর বাইরে আর কোনো তথ্য নেই।
পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত করছে, যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিভিন্ন মামলায় ও ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে নাম এসেছে তারা কোথায়? তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ কি হবে? তাদের দায় আপনারা পেয়েছেন কিনা? জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, গণমাধ্যমে অনেকের নাম পেয়েছি। আমরা নিজেরাও তদন্ত করছি। আমরা তাদের অবস্থান বের করতে পারিনি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। কে কোথায় আছেন সেটা স্পষ্ট নয়। দেশের ভেতরে থাকলে আইনের আওতায় আসবে যদি অবস্থান চিহ্নিত করতে পারি। আর যদি বাইরে থাকেন তাহলেও বিধিগত প্রক্রিয়া আছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অনুযায়ী চেষ্টা করছি। তাদের দায় এখনো প্রমাণিত হয়নি। সেটা তখনই বলা যাবে যখন মামলার তদন্ত শেষ হবে। তবে তাদের দায় তো ছিলই। তারা কেউই দায় এড়াতে পারবেন না। তারা তো সশরীরে থেকে পুলিশকে কমান্ড করেছেন। আইনি প্রক্রিয়া তো আছে। সব তথ্য প্রমাণ দিয়েই তাদের দায় নিরূপণ করা হবে। এবং আদালত তথ্যপ্রমাণই দেখেন।
আন্দোলনে এতোগুলো মানুষ মারা গেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে কেন এশিয়ার ইতিহাসেও এমন ঘটনা নেই উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, এমন একটা ঘটনা ও পরিবর্তনের পরও আমাদেরও সক্ষমতায় কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটেছে। সব জায়গায় সঠিক লোক দিয়ে আমরা শেষ করতে পারিনি। আমাদের পুনর্গঠনের কাজটা কিন্তু চলমান। বদলি হচ্ছে। তদন্ত করতে পারে সেরকম সক্ষম লোকদের বাছাই করে এই্ কাজে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া, সারাদেশে বিভাগ অনুযায়ী আলাদা মেন্টরিং ও মনিটরিং কমিটি করেছি। ঊর্ধ্বতন এবং অভিজ্ঞ, যারা বিপুল অভিজ্ঞতা নিয়ে অবসরে গেছেন তাদেরকেও আমরা সঙ্গে নিয়ে আটটা জায়গায় আলাদা মনিটরিং টিম করেছি। প্রতি থানায় মামলাগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তাকে গাইড ও মনিটরিং করার কাজ করবেন। যারা তদন্ত করছেন তাদের দক্ষতা আশানুরূপ নয়। আমার বিশ্বাস তদন্তের মানটা বাড়বে। আর যারা পালিয়েছেন তাদের আমরা লোকেট করতে পারবো।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) মো. আলমগীর আলম; অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো আকরাম হোসেন; অতিরিক্ত আইজি (এইচআর) আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ; ডিআইজি (অপারেশনস) মো. রেজাউল করিম; ডিআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) মো. কামরুল আহসান।
জেইউ/জেডএস