ড্যাপ বারবার সংশোধন ঢাকার বাসযোগ্যতাকে আরও সংকটে ফেলবে : আইপিডি
সম্প্রতি ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) যেসব সংশোধনীর প্রস্তাব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রকাশ করেছে, সেখানে শহরের বাসযোগ্যতা, ধারণক্ষমতা, নাগরিক সুবিধাদি ও পরিবেশ প্রাধান্য পায়নি। মূলত ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই বারবার ড্যাপ সংশোধন করা হয়েছে। ফলে ঢাকার বাসযোগ্যতা আরও সংকটে পড়বে বলে জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) আইপিডি আয়োজিত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পর্যালোচনা বিষয়ক অনলাইন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। পর্যালোচনা অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল ‘কোনো স্বার্থে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) বারংবার সংশোধনের উদ্যোগ : আইপিডির পর্যবেক্ষণ’।
এ সময় বক্তারা বলেন, ব্যবসায়ী ও স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে ড্যাপ (২০২২-৩৫) চূড়ান্ত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে দুইবার ড্যাপ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ড্যাপ সংশোধন প্রক্রিয়ায় রাজউকের কতিপয় কর্মকর্তা-পেশাজীবীদের এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ।
তারা আরও বলেন, বাসযোগ্যতার তলানিতে থাকা ঢাকা শহর থেকে ব্যবসায়িক মুনাফা ও গোষ্ঠী স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার সংস্কৃতি জুলাই গণঅভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশে কাম্য ছিল না। এই প্রবণতা চলতে থাকলে যানজট-দূষণে স্থবির ও অবাসযোগ্য হয়ে পড়া ঢাকা আরও নিশ্চল হয়ে পড়বে। এ থেকে উত্তরণের জন্য পরিকল্পনাগত টেকসই কৌশল ও পন্থা কাজে লাগিয়ে জনস্বার্থ, বাসযোগ্যতা, জনস্বার্থ ও পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়েই ড্যাপের প্রয়োজনীয় পরিমার্জনা করতে হবে।
আরও পড়ুন
আইপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, বড় শহরের জনঘনত্ব সাধারণত একরপ্রতি ১০০-১০০ জন বা প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৫-৩০ হাজার হয়। এই জনঘনত্বও শহরের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু নগর এলাকায় থাকে, যা শহরের প্রান্তের দিকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। চূড়ান্ত ড্যাপে ঢাকার অপরিকল্পিত এলাকা জিনিজিরার জনঘনত্ব কাঠাপ্রতি পরিবার সংখ্যা ১.২ বা একরপ্রতি ১৫০ দেওয়া থাকলেও ১৮ নভেম্বর রাজউক প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ১৫০ শতাংশ বেড়ে কাঠাপ্রতি পরিবার সংখ্যা ৩.০ বা একরপ্রতি প্রায় ৩৫০ জন প্রস্তাব করা হয়েছে। এই এলাকার আগে প্রস্তাবিত এফএআর মান ১.৩ থেকে ১৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রস্তাব করা হয়েছে ৩.৩। একই সঙ্গে ওয়েবসাইটে আপলোডকৃত প্লটভিত্তিক ফার সূচকে এ থ্রি (ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট বাড়ি) ক্যাটাগরির ফার মানসমূহ যেভাবে অপরিপক্কভাবে কেটে দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, তা দুরভিসন্ধিমূলক।
ব্লক ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক ফার বোনাস সাধারণত ১৫-২০ শতাংশ হয়ে থাকে। অথচ রাজউক এলাকাভিত্তিক ফার মানের তুলনায় ব্লকভিত্তিক ফারমান ৯০-১২০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রস্তাব করেছে, যা বৈশ্বিক পরিকল্পনা কৌশলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এভাবেই অনেক এলাকার ফার মান অযাচিতভাবে বেড়েছে। ফলে এসব এলাকার বাসযোগ্যতা আরও সংকটে পড়বে বলে মনে করে আইপিডি।
আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন- আইপিডি সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, পরিকল্পনাবিদ রাকিবুল রনি, স্থপতি আমিনুল ইসলাম ইমন, পরিবেশকর্মী আমিরুল রাজিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা প্রমুখ।
এএসএস/এমজে