প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ব্রামার
ঢাকা পোস্টে গত ১৭ নভেম্বর ‘এসি মেরামতে নয়-ছয়, সিলিন্ডারের রং পাল্টে ঢুকানো হচ্ছে নিম্ন মানের গ্যাস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নিয়ে বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের (ব্রামা) পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনটিকে বানোয়াট, অসত্য ও ভিত্তিহীন বলেও দাবি করা হয়।
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, রিফ্রিজারেন্ট আমদানিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমসের প্রত্যক্ষ অনুমতি ব্যতিরেকে আমদানি সম্পূর্ণভাবে অসম্ভব। অতএব কোনো নকল রিফ্রিজারেন্ট আমদানির সংবাদটি ভিত্তিহীন। চলতি বছর জুন মাসে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দুই কন্টেনার গ্যাসের চালান আটকের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ। পরে তারা নিশ্চিত হন যে তথ্যটি সঠিক নয়। সরকারের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত রিফ্রিজারেন্ট কন্টেইনার থেকে র্যান্ডম স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ল্যাবরটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারেন চালানের কোনোটিতেই ভেজাল গ্যাস নেই। পিউরিটি পরীক্ষায় ৯৯.৯৮% বা ৯৯.৯৯% সঠিক বলে
প্রমাণিত হয়।
প্রতিবাদপত্রে আরও বলা হয়, সাধারণত কোনো গ্যাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে অন্য আরেকটি গ্যাস এসিতে ব্যবহার করা সহজ বিষয় নয়। যে অভিজ্ঞ জন এই কাজের সাথে জড়িত তারা সহজেই বিষয়টি বুঝবেন। বর্তমানে এসিতে দাহ্য এবং অদাহ্য উভয় গ্যাসই ব্যবহৃত হচ্ছে। সর্বত্র ব্যবহৃত রিফ্রিজারেটরগুলোতে অধিকাংশই দাহ্য গ্যাস (600a) ব্যবহার করা হয়। ODP এবং GWP নিয়ন্ত্রণে আধুনিক বিশ্বে এখন রিফ্রিজারেন্ট ব্যবহারে প্রচুর পরিবর্তন ঘটছে। সিনথেটিক এবং ন্যাচারাল উভয় রিফ্রিজারেন্টের (গ্যাস) মধ্যে এখন দাহ্যতা বিদ্যমান। উদাহরণ স্বরূপ HFC 32 গ্যাস। এটি একটি দাহ্য গ্যাস। দাহ্যতার পরিমাণ হবে ১৪-৩১% বাতাসের আয়তনে। বিশ্বের সকল দেশে এই গ্যাসটি ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সিলিন্ডারে অর্ধেক পূর্ণ বা কিছু গ্যাস থাকা অবস্থায় ঠান্ডা করে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বল্প গ্যাস মেশানোও বেশ কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ৭/৮ কেজি গ্যাস রিফিল করা অসম্ভব। কারণ ম্যানুফেকচারিং কোম্পানিগুলোর দ্বারাই HC রিফ্রিজারেন্ট ৬.৫ কেজির ওপর সম্পূর্ণ খালি সিলিন্ডারে প্রবেশ করাতে পারে না। অতএব, ৩০ শতাংশ গ্যাসের সাথে ৭০ শতাংশ গ্যাস মিশানোর তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
আর-৪০৭সি (R-407C) গ্যাস আমদানি করে আর-২২ (R-22) নামের গ্যাস বিক্রির অভিযোগটি খোদ ব্রামার একটি চিঠির সূত্র ধরেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। ব্রামার পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিটি ২০২৪ সালের ২৫ মে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়, যার স্মারক নম্বর ‘ব্রামা/বি-১/২৪/৬৭’।
উল্লিখিত চিঠির সূত্র ধরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে গ্যাসের চালান আটকে দেয়। একইসাথে গোডাউনে গ্যাসের সিলিন্ডারের প্যাকেট পরিবর্তনের ভিডিও ঢাকা পোস্টের কাছে রয়েছে।
এসব তথ্য বিশ্লেষণ এবং এই খাতের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এসব বিষয়ে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর প্রমাণও ঢাকা পোস্টের হাতে রয়েছে।
এনএফ