ডিএনএ মিসম্যাচ হলে রাখা হবে কুমিল্লার ওয়ার সিমেট্রিতে
কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি (যুদ্ধসমাধি) থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৩ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সৈনিকের দেহাবশেষের কিছু অংশ ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) পরীক্ষার জন্য জাপান নেওয়া হবে। ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেলে পরবর্তীতে ঢাকায় সংগ্রহে থাকা সৈন্যদের দেহাবশেষ জাপানে নেওয়া হবে। তবে ডিএনএ না মিললে আবার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে দেহাবশেষ রাখা হবে।
কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষে রোববার (২৪ নভেম্বর) ঢাকায় জাপান দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন জাপানের সাত সদস্যের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দলনেতা ইনোওয়ে হাসোয়েকি।
ইনোওয়ে হাসোয়েকি বলেন, ময়নামতিতে ২৪ জন জাপানি সৈনিকের মধ্যে ২৩ জনের দেহাবশেষ আমরা সংগ্রহ করতে পেরেছি। সংগৃহীত অংশের কিছু জাপানে নিয়ে যাওয়া হবে ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য, বাকি অংশ এখানে (ঢাকায়-জাপান দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে) থাকবে। জাপানে ডিএনএ পরীক্ষা করার পর যদি দেখা যায় এটা জাপানি সৈন্যের না, তখন আমরা ময়নামতিতে কবরে নিয়ে আসব; আবার সেখানে সংগ্রহ করা হবে। আর যদি ডিএনএ পরীক্ষায় ম্যাচ করে তাহলে ঢাকায় সংগ্রহে রাখা অংশ সম্পূর্ণভাবে জাপানের নেওয়ার প্রক্রিয়া করা হবে।
বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় ৮১ বছর পর গত ১৩ নভেম্বর কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে জাপান। জাপান সাত সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল ২২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশটির সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়া কাজ শেষ করেছে। একজন সৈনিকের দেহাবশেষ খুঁজে পায়নি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল।
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন সৈনিককে এখানে সমাহিত করা হয়। কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন এ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ লাখ সৈনিকের দেহাবশেষ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে জাপান ১২ লাখ ৮০ হাজার সৈনিকের দেহাবশেষ দেশে ফেরাতে পেরেছে। দেশে ফিরিয়ে নেওয়া সৈন্যদের দেহাবশেষ ডিএনএ পরীক্ষা করার পর পরিবার বা স্বজনদের আগ্রহের ভিত্তিতে হস্তান্তর করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ ফেরানোর লক্ষ্য ছিল ২০০৫ পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত এটার সময়সীমা বাড়িয়ে ২০৩০ পর্যন্ত করার পরিকল্পনা করা হয়।
৮২ বছর পর জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কারণ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল। তারা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ করা, সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অনুমতি, টিম সার্ভের মতো অনেক কাজ করার পর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করতে একটু দেরি হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরপরই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ ছিল। পরবর্তীতে করোনা মহামারির কারণে দেরি হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞ দল বলেন, জাপানি জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা বিশেষ করে জনহারার আকুলতা সেটার জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি করেছে, আমাদের বিভিন্ন দেশে যেসব সৈন্য সমাহিত আছে তাদের এনে দেওয়া হয়। এজন্য এটা করা হচ্ছে। জাপান সরকারের যৌথ কিছু মন্ত্রণালয় এটার কাজ করছে।
কবে নাগাদ এ চাহিদার কথা আসছে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ দল বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই স্বজনদের দাবি ছিল, দেহাবশেষ নিয়ে যেতে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তখন প্রযুক্তিও এত উন্নত ছিল না। পরবর্তীতেও বিভিন্ন সময়ে স্বজনরা বললেও সেটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু দেখা গেল প্রযুক্তি ব্যবহার উন্নত হয়েছে আর এর কাজ শুরু করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ দলের কাছে জানতে চাওয়া হয় কোন কোন দেশ থেকে জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ নেওয়া সম্ভব হয়নি। জবাবে তারা বলেন, অনেক দেশের অনুমতি পাওয়া গেছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে দেহাবশেষ নেওয়া হয়নি। অনেক দেশ আছে ধর্মীয় বিধিনিষেধ আছে তারা নিতে দেয়নি, যেমন- উজবেকিস্তান। চীনের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক আছে। কিন্তু সেই অর্থে সুসম্পর্ক বলা যায় না। যার কারণে চীন থেকে রিকভারি করা সম্ভব হয়নি। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও জাপানের সম্পর্ক ভালো না। সেখান থেকেও রিকভারির কাজটা করা সম্ভব হয়নি।
ডিএনএ পরীক্ষা করার পর না মেলার ক্ষেত্রে কী পরিমাণ কেইস পাওয়া গেছে এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞ দল জানায়, এক কথায় বলতে গেলে কঠিন। এখন অবধি কয়েকশ কেইস এ রকম আছে। খুব বড় না।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।
এনআই/এমজেইউ