সেনাবাহিনী যেতেই পালালেন রিকশাচালকরা, ধাওয়া দিলেন পথচারীরাও
রাজধানীর রামপুরায় সড়ক থেকে রিকশাচালকদের সরিয়ে দিয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ফলে সড়কে যানচলাচল শুরু হয়েছে।
দুপুর ১টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে রিকশাচালকরা সড়ক ছেড়ে পালিয়ে যান। এ সময় স্থানীয় মানুষ ও পথচারীরাও রিকশাচালকদের ধাওয়া করেন। এতে সড়ক থেকে সরে যান রিকশাচালকরা।
সকাল থেকে রাজধানীর আগারগাঁও, কল্যাণপুর, গাবতলী, টেকনিক্যাল, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, ডেমরা ও খিলগাঁও এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর-১০-এ যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ট্রাফিক-মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইয়াসিনা ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিরপুর-১০ নম্বরে আপাতত যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আন্দোলনরত ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা মিরপুর-১০ নম্বরে অবস্থান করছেন। আমাদের ট্রাফিক সদস্যরা কাজ করছেন। আপাতত মিরপুর-১০ নম্বর দিয়ে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে।
মহাখালী এলাকার রেল লাইনের ওপরও অবস্থান নেন রিকশাচালকরা। এতে ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রেলক্রসিং এলাকায় অবস্থান নেওয়ার কারণে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে আশপাশের সব সড়কে। সড়ক থেকে সরে যেতে বললে তারা উল্টো পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ অবস্থায় তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া দেন। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক-ওদিকে পালিয়ে যান। পরে তাদের রেলগেটের পাশের সড়কে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
এই রিকশাচালকদের কয়েকজনকে মহাখালী এলাকার একটি শপিংমলে ভাঙচুর করতেও দেখা গেছে।
‘পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনীর কথায় আমরা রাস্তা থেকে সরে যাব না’
মহাখালী এলাকায় অটোরিকশা চালকরা বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছেড়ে যাব না। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তে আমাদের পেটে লাথি দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন কী করব, চুরি করব নাকি ছিনতাই করব। রিকশা না চালাতে পারলে আমরা কী করে চলব, কীভাবে টাকা আয় করব। তাই পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনী যত চেষ্টাই করুক না কেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছেড়ে যাব না।
তারা বলছেন, আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিনা উস্কানিতে আমাদের লাঠিপেটা করে। আমরা তো আমাদের পেটের দায়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। তাহলে কেন বিনা কারণে আমাদের এভাবে মারা হলো।
আন্দোলনরত ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক সজীব বলেন, আমার পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী আমি। আমি রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করি এবং আমার পরিবার চালাই। এখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এতে করে আমার পেটে লাথি মারা হয়েছে। তাহলে আমি এখন কী করব, আমার সংসার কীভাবে চালাব।
গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
আদালতের ওই নির্দেশনার পর গতকাল রাজধানীর দয়াগঞ্জ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে রিকশাচালকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।
এমএসি/এনএফ