শব্দদূষণ বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও শাস্তির ব্যবস্থা হচ্ছে
পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে আমাদেরকে লড়াই করতে হবে। বাংলাদেশ শব্দ দূষণের পৃথিবীতে এক নম্বর অবস্থানে আছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছি কিন্তু এরকম একটি অসভ্য প্র্যাকটিস (অনুশীলন) চালু রাখবো সেটি হতে পারে না। অন্তত শহরগুলোতে শব্দ দূষণ বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ অডিটোরিয়ামে ৩য় ন্যাশনাল ন্যাচার ফেস্টিভ্যালের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, শব্দদূষণের প্রথম উৎস হচ্ছে হর্ন। এটি আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা নিজেদের গাড়ি থেকেই যদি হর্ন না বাজানোর অভ্যাস করতে পারি তাহলে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। সামনের ডিসেম্বর মাসের শেষ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার দশটি রাস্তায় হর্ন বাজানো বন্ধে সচেতনতা তৈরি করা হবে। একইসঙ্গে আইন প্রয়োগের কাজও শুরু হবে। আমরা এরই মধ্যেই বিমানবন্দর এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করেছি। সেখানকার কিছু অভিজ্ঞতাও আমাদের হয়েছে।
আরও পড়ুন
জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, গত ৫০ বছরের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে। আবার দক্ষিণ অঞ্চলে এরকম বন্যাও মানুষ আগে কখনো দেখেনি। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি বড় কারণ হচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো।
আমাদের কাছে (বাংলাদেশে) নবায়নযোগ্য জ্বালানি রয়েছে। যা আমরা অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় অনেক কম টাকায় পেতে পারি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিটি ভবনের উপরই যে সোলার প্যানেল রয়েছে সেটি কাজ করে না। যদি ওই সোলার প্যানেলগুলো কাজ করত তাহলে ২০ মিনিট কিংবা কয়েক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে কাউকে চিন্তিত হতে হতো না৷ আর সরকারকেও উচ্চ মূল্যে জ্বালানি কিনে এসে নিসরবরাহ করতে হতো না। সৌর এবং বায়ু বিদ্যুতে বাংলাদেশে বড় সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে উন্নত বিশ্বের ভোগবাদী জীবনযাপনের জন্য। যা ফরাসি বিপ্লবের পরে শুরু হয়েছে। এর কারণেই গ্রীন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ অনেক প্রাণ ও জীববৈচিত্র হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য আমাদের জীবনযাত্রার বর্তমান ধরণ পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা যদি আমরা উন্নত করতে পারতাম তাহলে ঢাকার উপর এতো চাপ পড়তো না। প্রকৃতির প্রতি ন্যায় বিচার করতে হলেই আমাদের জীবন দর্শন পাল্টাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পলিথিনের বিকল্প কি হবে সেটা নিয়ে বিতর্ক করা একটি ‘অযৌক্তিক বিতর্ক’। আমরা যে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার করছি সেটি ১০০ বছরেও মাটিতে ও পানিতে মিশবে না। এটি ভেঙে যাবে। ভেঙে গিয়ে মাইক্রো প্লাস্টিক হবে। সেই মাইক্রো প্লাস্টিকগুলো পর্যায়ক্রমে মানুষের শরীরে আসবে। এখন মায়ের দুধে, প্লাসেন্টাতে, রক্তে, লবণে এমনকি মানুষের মস্তিষ্কেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিত মিলছে। সেখানে বিকল্প নিয়ে কথা বলাটা অদ্ভুত তর্ক। এখন পৃথিবীতে প্লাস্টিকের নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন হচ্ছে। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটকে একটি বাজার প্রতিযোগিতায় নিয়ে আসা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ (এনডিসি, পিএসসি) সভাপতিত্ব করেন। এসময় ন্যাচার ক্লাবের চিফ কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ নুরুন্নবীসহ অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
আরএইচটি/এমএসএ