নদী ও জলাশয় রক্ষায় তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান
দেশের নদী ও জলাশয় রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য তরুণদের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য কাজ করতে হবে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুরসম্রাট আলাউদ্দিন মিউজিক হলে ‘নদী ও জলাশয় সুরক্ষা: প্রত্যাশা এবং সুপারিশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের আওতায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরামের (এমএএফ) সভাপতি এবিএম মোমিনুল হক বলেন, ‘এই অঞ্চলে শব্দদূষণ, স্বাস্থ্যসেবার মান, বাল্যবিবাহ এবং মাদক সমস্যা গুরুতর হয়ে উঠছে। সর্বস্তরের মানুষকে এইসব সমস্যা মোকাবিলার প্রস্তুত হতে হবে। নতুন প্রজন্মকে কাজ করার অনুপ্রেরণা দিতে হবে।’নদী রক্ষার জন্য নাব্যতা বজায় রাখার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী রনি সাহা বলেন, ‘বর্তমানে খাল খনন প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও সেখানে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। নদী ও জলাশয় রক্ষার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।’
এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খালিদ ইবনে সাদিক বলেন, গৃহস্থালি বর্জ্যের কারণে নদীর স্বাভাবিক অবস্থা দূষিত হচ্ছে। তবে নদী দখলদার এবং অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন ‘তরী বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা ও আহ্বায়ক শামীম আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার আবুল বাশার ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি জানান, জনগণের সমস্যাগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই ক্যাম্পেইন কাজ করছে।
এ সময় সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা তুলে ধরার আহ্বান তিনি।ইউএসএআইডির স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় আলোচনা, নাট্য প্রদর্শনী, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচি পরিচালনা করছে। ক্যাম্পেইনটির আওতায় www.amiojittechai.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রহণ করা হচ্ছে নাগরিকদের দাবি ও মতামত।
অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা ছাড়াও ইন্টারেক্টিভ থিয়েটার, কুইজ ও ভিডিও মেসেজ প্রতিযোগিতা এবং ক্যাম্পেইনের রিল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অংশগ্রহণকারীরা তাদের নাগরিক অধিকার বিষয়ক দাবি, মতামত, প্রত্যাশা ও সমকালীন বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের সমাধান তুলে ধরেন। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন কারেন্ট জাল এবং চায়না জালের কারণে নদীর বাস্তুসংস্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি জরুরি বলে জানান তিনি।এ সময় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন।
অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা ছাড়াও ‘নেতা আসছে’ শিরোনামে একটি মঞ্চনাটক পরিবেশিত হয়। নাটকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে ক্ষুদ্র ঋণ, পাবলিক টয়লেট, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তাসহ বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় কুইজ প্রতিযোগিতা ও ক্যাম্পেইনের রিল প্রদর্শনী। অনুষ্ঠান শেষে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীসহ জেলার দুই শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এমএ