গণহত্যায় জড়িত আসামিদের দেখিয়ে দিলেও ধরতে ‘তালবাহানা করছে পুলিশ’
রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত-আহত শিক্ষার্থীদের পরিবার বন্ধু স্বজন ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, আসামি গ্রেপ্তারে গড়িমসি করছে থানা পুলিশ। এসময় গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিন দফা দাবি জানান ছাত্র-জনতা।
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মিরপুর-১০ গোলচত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেন তারা। পরে পুলিশের সঙ্গে থানায় প্রবেশ করেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষের সামনে বিক্ষোভও করেন।
বিক্ষোভের মুখে নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে ওসি গিয়াস উদ্দিন ছাত্র-জনতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও আসামিদের গ্রেপ্তারে অগ্রগতি না থাকার কৈফিয়ত চান তারা। অন্যদিকে পুলিশের কাছে সন্তান হত্যার বিচার চান স্বজনরা। চিহ্নিত হত্যাকারীরা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ জানান তারা।
এসময় বিক্ষুব্ধদের সান্ত্বনা ও আসামি গ্রেপ্তারে আশ্বস্ত করেন তিনি। গণঅভ্যুত্থানের পর আহত-নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান তুলে পুলিশের কার্যক্রমের ফিরিস্তিও তুলে ধরেন ওসি গিয়াস উদ্দিন।
আন্দোলনে মিরপুরে শহীদ সিফাতের বাবা কামাল হাওলাদার বলেন, আমার ছেলে হত্যার মামলার একজন আসামিও গ্রেপ্তার হয়নি। আমি যোগাযোগ করেছি। একদিন রাতে ওসিকে ফোন করেছি। তিনি দুজন সিভিলে পুলিশ পাঠান। তাদের আমি নিজে দেখিয়েছি আমার ছেলে হত্যা মামলার আসামিদের। কিন্তু পুলিশ সেদিন গ্রেপ্তার করেনি আসামিদের।
আরও পড়ুন
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার জীবন তো হুমকির মুখে। সন্ত্রাসী ভাড়া কইরা আইন্না তো আমারেও গুলি কইরা মাইরা ফালাইতে পারে। আমি তো পাবলিক। কি করার আছে আমার। প্রশাসন তালবাহানা করছে। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। আমার তো আরও একটা ছেলে আছে, স্ত্রী আছে। আসামিরা গ্রেপ্তার হলে আমি অন্তত আশ্বস্ত হই। আমার পরিবারটা বাঁইচ্চা যায়। আমি আকুল আবেদন জানাচ্ছি, অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসুন। আমরা যারা শহীদ পরিবার আছি, শেখ হাসিনা পালালেও সন্ত্রাসীরা পালায়নি, হুমকিবোধ করছি।
এসময় ওসি বলেন, নির্দ্বিধায় আসামি গ্রেপ্তার করছি। সব মামলায় আমার সোচ্চার আছি। ৫ আগস্টের আগে যারা শহীদ হয়েছেন সেসব মামলা বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মনিটরিং করছে। আসামি গ্রেপ্তারও হচ্ছে। ইতোপূর্বে আমাদের থানায় একশর বেশি আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।
এসময় উপস্থিত সবাইকে শহীদ সিফাতের বাবা কামাল হাওলাদারের পরিবারের নিরাপত্তায় ব্যবস্থাগ্রহণ ও মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন ওসি।
পরে ওসি গিয়াস উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ৩৫টা মামলায় ৯০ জন আসামি গ্রেপ্তারের পর জেলে আছে। অনেককে টাকা খেয়ে ছেড়ে দেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। আদালত থেকে কেউ জামিনে বেরিয়ে গেলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা আসামি গ্রেপ্তারে তৎপর আছি।
শহীদ শাহরিয়ার জাহান আলভীর বাবা আবুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, গত ৪ আগস্ট আমার ছেলে মিরপুর-১০ গোলচত্বরে গুলিতে নিহত হয়েছে। কোনো বাদী কখনো আসামি ধরে দেবে না। এটা তো পুলিশের দায়িত্ব আসামি ধরা। কিন্তু সরকার থেকে বেতন নিলেও পুলিশ আসামি না ধরে তালবাহানা করছে। অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা করেছি। আমি বাদী হয়ে হয়রানির শিকার। পুলিশ কোনো সহযোগিতা করছে না।
ওসির বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হয়ে মিরপুরের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ তিন দফা দাবি জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের মিরপুরের সমন্বয়ক এস এম সায়েম বলেন, গণহত্যাকারীদের বিচার, রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর পদত্যাগ ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার কারণেই আজ আমাদের থানায় আসতে হচ্ছে, গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাতে হচ্ছে। আমাদের দাবি আদায়ে আমরা লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাব। রাতে মিরপুর-১০ গোলচত্বরে রাতে গণহত্যার ফুটেজ প্রদর্শনী অনুষ্ঠান হবে। আমরা গণহত্যার বিচার চাই। আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও আমরা রাজপথ ছাড়িনি। গণহত্যায় যারা জড়িত তাদের বিচার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেই করেই ছাড়ব।
জেইউ/এসএসএইচ