ঢাকার আশপাশে ৮টি আয়নাঘর খুঁজে পেয়েছে গুম কমিশন
ঢাকা ও তার আশপাশে আটটি আয়নাঘর বা গোপন বন্দিশালা খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি। রাজনৈতিক, জঙ্গি সন্দেহসহ চার কারণে অধিকাংশ গুম করা হয়েছিল বলে জানায় কমিশন।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে কমিশনের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে বক্তব্য রাখেন কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, গুমের বন্দিশালা বা আয়নাগুলো পরিদর্শন করার কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে ডিজিএফআই, র্যাব-১ (উত্তরা), র্যাব হেডকোয়ার্টার, র্যাব-১১ (নারায়ণগঞ্জ), র্যাব-২ (বছিলা), র্যাব-২ ক্রাইস ডিভিশন সেন্টার (আগারগাঁও) পরিদর্শন করেছি। ডিবি আগে করা হয়েছে।
কী কারণে গুম করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। আবার কিছু ফেসবুকে সমালোচনা করার কারণে হয়েছে। কিছু লোক গুম হয়েছে যাদের কোনো পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি ছিল না। কিছু আছে যারা সরকারে সমালোচনা করছে বিভিন্ন মিডিয়াতে। সেনাবাহিনীতে যেসব সদস্য থেকে গুম করা হয়েছে তাদের কী কারণ আছে সেটাই বোঝা যায়নি। কারা তুলে নিয়ে গেছিল অনেকেই আইডেন্টিফাই করতে পারেনি।
আরও পড়ুন
কমিশনের সভাপতি আরও বলেন, এই মুহূর্তে কতদিন গুম আছে এটা বলা মুশকিল। অনেকগুলো কেসের গুম কী কারণে তা বুঝতে পারছি না। প্রমাণ মিলছে না। আমাদের আওতায় পড়ে না এমন ২২টি কেস পেয়েছি। হয়তো কোনো ভাড়াটিয়া লোকদের দিয়ে গুম করেছিল। সেই কেসগুলো পুলিশদের কাছে পাঠিয়ে দেবো, তারা ইনভেস্টিগেশন করবে।
৫ আগস্টের পর তিনজন গুম থেকে বের হয়েছেন। এদের বাইরে কী আর কেউ আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে গুম কমিশনের সদস্য নুর খান বলেন, তিনজনের বাইরে আরও দুই একজনের খবর আমরা পেয়েছি। ইতোমধ্যে কথাও বলেছি। এখনই বলা যাবে না যে ৫ তারিখের পর কতজন রিলিজ হয়েছে। পত্রপত্রিকা ও বিভিন্নভাবে আমরা জানতে পেরেছি দুইশত মানুষের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। সেখানে আমরা বলতে পারছি না যে এটা গুম কি গুম না। তবে অধিকাংশ পরিবার থেকে অভিযোগ করছে যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে।
‘এই সংক্রান্ত যতগুলো নিউজ পত্রপত্রিকা করেছে সবগুলো ঘটনার দালিলিক প্রমাণ পেয়ে গেছি। মানুষ গুম থাকা অবস্থায় কীভাবে রোজনামচা লেখে, কীভাবে দিন গণনা করে এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আয়নাঘরের চেয়েও নিকৃষ্টতম সেল কাছাকাছি জায়গাতেই ছিল। আমরা সেগুলো পরিদর্শন করেছি, দেখেছি।’
গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আয়না ঘরের মতো যতগুলো জায়গা আমরা গিয়েছি সেখানে বন্দি অবস্থায় কাউকে পাইনি। অনেকগুলো বন্দিশালা ধ্বংস করা হয়েছে। ভিকটিমের বর্ণনা অনুযায়ী আমরা সেগুলো পেয়েছি। ৪০০ কেসের মধ্যে ১৭২টা পেয়েছি র্যাবের সংশ্লিষ্টতা, সিটিটিসির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি ৩৭টা কেসে, ডিবি পুলিশের ৫৫টা, ডিজিএফআই ২৬টা, পুলিশের ২৫টা কেসে সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। সাদা পোশাকে পরিচয়ের পেয়েছি ৬৮টা কেস।
তিনি আরও বলেন, আমরা শুনেছি অনেক জায়গায় বিভিন্ন বাহিনী সেফ হাউস আছে। আমাদের সোর্সের মাধ্যমে আমরা জানার চেষ্টা করছি একজাক্ট লোকেশনগুলো কোথায়।
কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, চারটি কারণে অধিকাংশ গুম করা হয়েছে। তার মধ্যে রাজনৈতিক, জঙ্গি সন্দেহে, ব্যবসায়িক ও পারিবারিক কারণেও মানুষ গুম হয়েছেন। গোপন বন্দিশালা এ পর্যন্ত আমরা আটটা আনকাভার করেছি। আমাদের ধারণা ঢাকা শহরের প্রতিটি এলাকায় গোপন বন্দিশালা পাবো। ঢাকার বাইরেও প্রতিটি এলাকা পাওয়া যেতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আলামত ধ্বংস করা থেকে নিজেদের রক্ষা চেষ্টা, এখন সেটা করে লাভ নাই। যে ভিকটিম বেঁচে আছে তাদের জবানবন্দি অলরেডি কালেক্ট করা হয়েছে। সেই জবান বন্দি অনুযায়ী আমরা গোপন বন্দিশালা খুঁজে বের করব। গোপন বন্দিশালা ধ্বংস করার আগে নিজেতো রক্ষা করুন।
এমএসআই/এমএ