পোস্টাল অর্ডার জালিয়াতিতে দম্পতিসহ আটক ছয়
তিন কোটি টাকার পোস্টাল অর্ডার জালিয়াতির অভিযোগে এক দম্পতিসহ প্রতারকচক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব।
রোববার (৩ জানুয়ারি) বিকালে র্যাব-১ এর একটি দল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের তালতলায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে ওই দম্পতিকে আটক করে। তারা হলেন, চক্রের প্রধান মো. ফজুলল হক আশরাফ (৫২) ও তার স্ত্রী মোসা. আছমা আক্তার শিমু (৩৮)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা, জিপিও’র বিপুল পরিমাণ সিল ও মানি অর্ডারের ফরম উদ্ধার করা হয়।
পরে তাদের দেওয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে জিপিও’র ৩ জন কর্মচারী ও তাদের এক সহযোগিকে আটক করে র্যাব।
আটকরা হলেন, আমজাদ আলী (৫৫), মোস্তাফিজুর রহমান (৫২), ডলি রাণী সাহা (৫৩) ও লিংকন সাহা (২৪)। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার, স্ক্যানার, প্রিন্টার, জাল ডাকটিকেট, জাল মানি অর্ডার, বিভিন্ন জিওপি’র ৪২টি সিল জব্দ করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, প্রতারকচক্রের প্রধান ফজুলল হক আশরাফ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, জিপিও’র কিছু কর্মচারীর সহযোগিতায় তারা জালিয়াতি করে আসছিলেন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক হিসেবে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ফজুলল হক আশরাফ ২০১৮ সালে পোস্টাল সার্ভিসের কিছু কর্মচারীর সহায়তায় মানি অর্ডারের টাকার পরিমাণ পরিবর্তন করে জালিয়াতি শুরু করেন।
ফজলুল পথশিশু ফাউন্ডেশন, সানোয়ার ফাউন্ডেশন এবং অ্যারোলাইট বায়োগ্যাস নামক সংগঠনের প্রধান। পথশিশুদের উন্নয়নে তাদের দিয়ে কাগজের ঠোংগা বানিয়ে বিক্রয় করে থাকেন বলে তিনি দাবি করেন। স্বল্পমূল্যে এই কাগজের সরবরাহ চালু রাখতে তিনি প্রথমে সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড চেয়ারম্যানদের কাছে চিঠি দেন। এতে সাড়া না পেয়ে হাইকোর্টে এক রিটের মাধ্যমে সব শিক্ষাবোর্ড থেকে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রত্যেক খাতা ৬০ পয়সা মূল্যে ক্রয় করার ক্ষমতা পান। পরে তিনি বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষকদের কাছ থেকে ৬০০ টাকায় ১০০০ খাতা কেনা শুরু করেন। এ সময়ই তিনি অভিনব কায়দায় পোস্টাল মানি অর্ডার প্রতারণা শুরু করেন।
আশিক বিল্লাহ জানান, তিনি জিপিও’র মানি অর্ডার ফরম জাল করে ৬০০ টাকা মূল্যের মানি অর্ডার শিক্ষকদের নামে পাঠাতে শুরু করেন। আসল মানি অর্ডারের মত সই এবং সিল সম্বলিত নকল মানি অর্ডারগুলো কৌশলে জিপিওসহ বিভিন্ন পোস্ট অফিসে বিতরণ চ্যানেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে জাল মানি অর্ডারগুলো বিতরণ হওয়ায় ডেলিভারি পয়েন্ট থেকে কোনোরকম সন্দেহ প্রকাশ করা হয়নি।
র্যাব জানায়, ফজলুল অ্যারোলাইট বায়োগ্যাস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’র আদলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকদের কাছে তথাকথিত জৈব সার পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এখানেও তিনি একই পদ্ধতিতে জাল মানি অর্ডারের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে শুরু করেন।
তিনি কৃষকদের সৌদির খেজুর চারা বিনামূল্যে বিতরণের প্রলোভন দেখান। এজন্য রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ ১০০ টাকা ধার্য করে বিকাশের মাধ্যমে তা গ্রহণ করে। একইসঙ্গে তার প্রতিষ্ঠান পথশিশু কল্যাণ ট্রাস্ট দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পোস্টাল অর্ডারের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে।
জেইউ/এসআরএস