চার মাসের মাথায় ডিসি বদলি, নেপথ্যে নারী!
পদায়নের মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় সরিয়ে দেওয়া হলো বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আ ন ম ফয়জুল হককে। তার জায়গায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আজিজুর রহমানকে নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। ডিসি ফয়জুল হককে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
প্রশাসনে ডিসিদের বদলি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও ফয়জুল হকের বদলি নিয়ে জনপ্রশাসন ও বাগেরহাটে বেশ আলোচনা চলছে। এর কারণ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ডিসি ফয়জুল হকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে করা ওই অভিযোগে এক ব্যক্তি উল্লেখ করেন, ডিসি ফয়জুল হক তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন এবং এ কারণে তাদের সংসার ভেঙে যাচ্ছে। তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে তাদের সংসার রক্ষা করার অনুরোধ জানান।
অভিযোগটি আমলে নিয়েই ডিসি ফয়জুল হককে বদলি করা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি।
নিজের বদলির জন্য ভাইরাল হওয়া ওই অভিযোগকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বদলি হওয়া কর্মকর্তা আ ন ম ফয়জুল হকও। তিনি সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হঠাৎ কেন এ বদলি, তার কারণ আমিও আসলে জানি না। তবে সম্প্রতি এক ব্যক্তির অভিযোগ হয়তো এর পেছনে কাজ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারীকে আমি চিনি না। কোনোদিন তার সঙ্গে কথাও হয়নি। কী কারণে এ অভিযোগ করা হয়েছে তাও আমি জানি না। তবে শুনেছি, ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার স্ত্রীর তিনবার ছাড়াছাড়ি হয়েছে।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ) এ এফ এম হায়াতুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদে এ ধরনের একটি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে শুনেছি। তবে এ অভিযোগ তদন্ত করার জন্য ঈদের আগ পর্যন্ত আমার কাছে আসেনি বা কোনো নির্দেশনা পাইনি। ঈদের পর রোববার প্রথম অফিস করেছি সেদিনও তা পাইনি। মঙ্গলবার (১৮ মে) বলতে পারব আসলে কী হয়েছে।
সচিবালয়ের একটি সূত্র বলছে, অভিযোগটি চিঠির মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদে করার পর তা থেকে আপত্তিকর বাক্য ও অভিযোগকারীর নাম-ঠিকানা গোপন করে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। যা পরবর্তীতে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের নজরে আসার পর তা নিয়ে করণীয় ঠিক করতে রমজানের মধ্যে একটি বৈঠক করা হয়।
বৈঠকে জনপ্রশাসন বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করে তারপর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অভিযুক্ত জেলা প্রশাসককে পদ থেকে সরিয়ে তারপর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। এর পেছনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের যুক্তি হলো, অতীতে জামালপুরের ডিসির নারীঘটিত ঘটনা এবং কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক কর্তৃক সাংবাদিককে আটক করে মারধর করার ঘটনায় তারা বিব্রত। এজন্য আগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে পদ থেকে সরিয়ে তারপর অন্যান্য প্রক্রিয়ায় যাওয়ার পক্ষে তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হ্যাঁ একটা অভিযোগ পড়েছে। কিন্তু পাল্টা অভিযোগও আছে। তবে এটা তদন্ত হওয়া উচিত। বদলির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি সরকারের ইচ্ছার ব্যাপার। প্রয়োজনে যে কাউকে বদলি করতে পারে সরকার। চার মাসের মাথায় কাউকে বদলি কি স্বাভাবিক- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক বদলি বলা যাবে না।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী ব্যক্তি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘অভিযুক্তকে জেলা প্রশাসকের পদ থেকে সরানোর পর আমার প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে আমার সংসার ভাঙার জন্য তার প্রশাসনিক শাস্তি দাবি করছি।’
এনএম/আরএইচ/জেএস