ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত শিথিল হচ্ছে
বিদ্যমান সড়ক পরিবহন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংশোধনীর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতাও শিথিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে এ সংক্রান্ত খসড়ায়।
খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই একজন চালক নিবন্ধন করা থ্রি-হুইলার বা তিন চাকার গাড়ি চালাতে পারবেন। তবে অন্য পরিবহনগুলো চালানোর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অপরিবর্তিত থাকবে।
একজন সহকারী বা সুপারভাইজারের ১০ বছরের গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা থাকলে এবং ড্রাইভিং সক্ষমতা বোর্ডে পাশ করলে তার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ কয়েকটি শর্ত মানা প্রয়োজন হবে না বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বিদ্যমান আইনের ১২৬টি ধারার মধ্যে কমপক্ষে ২৯টি ধারা সংশোধন করা হবে। ভারি ও মাঝারি মোটরযানের সংজ্ঞাসহ আটটি বিষয়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানিয়েছে, এখন ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণি পাস। অপেশাদারের জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে। তাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
বিআরটিএ আরও জানা যায়, পেশাদার হালকা (মোটরযানের ওজন ২৫০০কেজি-এর নিচে) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে। পেশাদার মধ্যম (মোটরযানের ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২৩ বছর এবং পেশাদার হালকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে তিন বছর হতে হবে।
পেশাদার ভারী (মোটরযানের ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি) ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৬ বছর হতে হবে এবং পেশাদার মধ্যম ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার কমপক্ষে তিন বছর হতে হবে। সংশোধনীতে বয়সের বিষয়ে নতুন কিছুই সংযোজন বা বিয়োজন করা হচ্ছে না।
জানা গেছে, সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের জন্য তৈরি করা খসড়ার ওপর অংশীজনদের মতামত নেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। প্রথমে মতামত দেওয়ার সময়সীমা ছিল ১৩ মে পর্যন্ত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে তা আগামী ২৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গত ৯ মে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়।
অভিযোগ আছে, দেশের বেশিরভাগ চালক নিরক্ষর হওয়ায় তারা সড়কে গাড়ি চালানোর নির্দেশনাগুলো পড়তে পারেন না। এ ধরনের চালকদের সুপারিশের মাধ্যমে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবহন নেতারা প্রভাব খাটিয়ে থাকেন। এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতেই পরিবহন নেতাদের চাপে শিক্ষাগত যোগ্যতার এই অংশ এবার শিথিল করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশেনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, আমরা কোনো ধরনের চাপ তৈরি করিনি। এই আইনের বিভিন্ন ধারা সংশোধনের জন্য বহু আগে থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি। শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত শিথিল করা উচিত।
পরিবহন সংগঠনগুলোর চাপে বর্তমান সড়ক পরিবহন আইনের ১১টি ধারায় বিদ্যমান শাস্তির পরিমাণ কমিয়ে ও চারটি ধারার কারাদণ্ডের বিধান কমিয়ে এটি সংশোধনের বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন।
পিএসডি/এমএইচএস