রয়্যাল এনফিল্ড : জেনে নিন কোন মডেলের বাইকে কী ফিচার
রয়্যাল এনফিল্ড! নামটা শুনলেই অনেকের মনে শিহরন জাগে। প্রাচীনতম ব্রিটিশ টু-হুইলার ব্র্যান্ডের এই মোটরসাইকেল অনেক বাইকপ্রেমীর কাছে ‘স্বপ্ন’। অবশেষে সেই স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। বাংলাদেশের বাজারে ২১ অক্টোবর অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে অটোমোবাইল যুগের নতুন অধ্যায়ের। দেশের বাজারে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল আনছে স্থানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ইফাদ মোটরস।
বাংলাদেশের বাজারে ইফাদ অটোস চার মডেলের রয়্যাল এনফিল্ড ৩৫০ সিসি বাইক বাজারজাত করবে। এগুলো হলো— রয়্যাল এনফিল্ড হান্টার, ক্লাসিক, বুলেট ও মিটিওর। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দামে কম থাকবে রয়্যাল এনফিল্ড হান্টার ৩৫০। এটি ভারতের বাজারে ওই কোম্পানির সর্বাধিক বিক্রিত বাইক। সেখানে মাত্র ৬ মাসে ১ লাখের বেশি হান্টার ৩৫০ বিক্রি করেছে রয়্যাল এনফিল্ড।
রয়্যাল এনফিল্ড হান্টার ৩৫০
এই মডেলের বাইকটি রেট্রো রোডস্টার ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে। বাইকের সামনে থাকছে গোলাকার হেডলাইট, দুই পাশে দুটি মিরর, টার্ন ইন্ডিকেটর এবং কনসোল। সঙ্গে থাকছে রোটারি সুইচ, টিয়ার-ড্রপ শেইপের ফুয়েল ট্যাংক, যা এই বাইকের রেট্রো লুককে যেন আরও বাড়িয়ে দেয়।
তবে সাদামাটা হলেও এই বাইকের বিল্ড-কোয়ালিটি এবং পেইন্ট ফিনিশ আপনাকে অবশ্যই প্রিমিয়াম ফিলিং দেবে।
রয়্যাল এনফিল্ড হান্টার ৩৫০ মডেলটিতে একটি একক সিলিন্ডার রয়েছে, যা ৩৪৯ সিসি ইঞ্জিন দ্বারা চালিত। যা ৬ হাজার ১০০ আরপিএমে ২০.২বিএইচপির হর্স পাওয়ার এবং ৪ হাজার আরপিএমে ২৭ এনএমের টর্ক প্রদান করে।
হান্টার ৩৫০-এ একটি স্ট্যান্ডার্ড স্টিলের ফ্রেম আছে এবং ড্রাইভার ও যাত্রী উভয়ের জন্য ফুটপেগ আছে। এতে টেলিস্কোপিক ফর্ক ফ্রন্ট সাসপেনশন এবং একটি টুইন সাইড সুইং আর্ম রিয়ার সাসপেনশন রয়েছে যাতে এটি মসৃণ গতিতে চলতে পারে। ব্রেকিং-এর জন্য থাকছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম। সামনে ও পেছনে ব্যবহার করা হয়েছে ডিস্ক ব্রেক। মোটরসাইকেলটির ডাইমেনশন এবং ১৮১ কেজির ওজন এটি চালাতে এবং ব্যবহার করতে সুবিধা দেয়।
সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে সামনে এবং পেছনে উভয় ক্ষেত্রেই স্ট্যান্ডার্ড হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি-লক ব্রেকও। মোটরসাইকেলটিতে ৩১.১ ইঞ্চি উচ্চতার একটি আরামদায়ক টু-পিস সিট আছে যা চালক এবং যাত্রী উভয়ের জন্যই আরামদায়ক।
আরও পড়ুন
বাইকে ব্যবহার করা হয়েছে ওয়েট-মাল্টিপ্লেট ক্লাচ এবং থাকছে ৫টি গিয়ার। এই ইঞ্জিন আপনাকে ২৫ কিলোমিটার প্রতি লিটারের মাইলেজ দিতে পারবে এবং সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতি তুলতে পারবে। ইঞ্জিনকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য থাকছে ১৩.৫ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক।
বাইকটিতে টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের টায়ারের সাইজ হচ্ছে ১০০/৯০-১৯ এবং পেছনের টায়ারের সাইজ হচ্ছে ১৪০/৭০-১৭। টিউবলেসের টায়ারের সঙ্গে অ্যালয় হুইল ব্যবহার করা হয়েছে।
রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০
রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০ মডেলটিতে একটি একক সিলিন্ডার এবং এয়ার-কুলড ৩৪৯ সিসি ইঞ্জিন রয়েছে। এটি ৬ হাজার ১০০ আরপিএমে ২০.২বিএইচপির হর্স পাওয়ার এবং ৪ হাজার আরপিএমে ২৭ এনএমের টর্ক প্রদান করে যা শহরে ও খোলা রাস্তায় চালানোর জন্য ভারসাম্যপূর্ণ।
একটি স্টিলের ফ্রেম রয়েছে এবং এতে চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্য স্ট্যান্ডার্ড হ্যান্ড গ্রিপস, হ্যান্ডেলবার এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ ফুট পেগ রয়েছে। মোটরসাইকেলটি একটি টেলিস্কোপিক ফর্ক ফ্রন্ট সাসপেনশন এবং একটি টুইন সাইড সুইং আর্ম রিয়ার সাসপেনশন দিয়ে সজ্জিত যা যাত্রাকে আরামদায়ক করবে।
নিরাপত্তার জন্য ক্লাসিক ৩৫০ এর সামনে এবং পেছনে উভয় দিকেই হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে একটি স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেমও।
বাইকের ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলে একটি স্ট্যান্ডার্ড স্পিডোমিটার এবং একটি ফুয়েল লেভেল ওয়ার্নিং লাইট রয়েছে। বর্ধিত কার্যকারিতার জন্য ঐচ্ছিক আনুষঙ্গিক যেমন হার্ড সাইড কেস, একটি পেছনের র্যাক এবং ব্যাগ লাইনার যোগ করা যেতে পারে।
রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০
রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০ হলো একটি চমৎকার ক্লাসিক ডিজাইনের ভিনটেজ স্টাইলের ক্রুইজার টাইপ মোটরবাইক। বাইকটি ক্লাসিক ভিনটেজ ডিজাইন, রিলাক্সিং রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স এবং আইকনিক থাম্পিং সাউন্ডের জন্য বিখ্যাত।
বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৩৪৯ সিসি ‘জে-সিরিজ’ ইঞ্জিন যা ৬ হাজার ১০০ আরপিএমে ২০.২বিএইচপিয়ের হর্স পাওয়ার এবং ৪ হাজার আরপিএমে ১৯.৯ পাউন্ড-ফুট টর্ক প্রদান করে। মোটরসাইকেলটি উচ্চ গতির জন্য ডিজাইন করা হয়নি। বরং প্রতি ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিমি গতির মধ্যে আরামদায়ক যাত্রার জন্য এটি একটি আদর্শ মডেল।
বাইকটির ট্রান্সমিশন সিস্টেম ম্যানুয়াল, এখানে ওয়েট মাল্টিপ্লেট ক্লাচ সিস্টেম সহ ৫-স্পিড কন্সটেন্ট মেশ গিয়ারবক্স ইনস্টল করা হয়েছে। ইঞ্জিনের বোর এবং স্ট্রোক যথাক্রমে ৭০ মিমি এবং ৯০ মিমি। এটির কম্প্রেশন রেশিও ৯.৫:১। ইঞ্জিনের পাওয়ার ডেলিভারি যথেষ্ট ভালো, তাই ভারি বাইক হলেও যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি বাইকটি স্ট্যাবল রাখতে পারবেন।
হাই-পারফর্মিং সাসপেনশন এবং উন্নত ব্রেকিং সিস্টেম বাইকটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। সাসপেনশন সিস্টেমে বাইকটির সামনের দিকে অ্যাডজাস্টেবল টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনের দিকে ৫-স্টেপ অ্যাডজাস্টেবল প্রি-লোড শক-অ্যাবজর্বার সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। এই সাসপেনশন সিস্টেম খুবই স্মুথ পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে। এটি যেকোনো ধাক্কা স্মুথলি অ্যাবজর্ব করতে পারে এবং ইঞ্জিনের ফ্রিকশন কমাতে সাহায্য করে।
বাইকটির বর্তমান সংস্করণটিতে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের চাকায় ৩০০ মিমির ডাবল পিস্টন ক্যালিপারের ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনের চাকায় ২৭০ মিমির ফ্লোটিং সিঙ্গেল পিস্টন ক্যালিপারের ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্রেকিং সিস্টেম আপনাকে স্থিরভাবে রাইড করতে এবং স্মুথভাবে থামতে সাহায্য করে, এমনকি রুক্ষ রাস্তায়ও।
বাইকটি মূলত রিলাক্সিং রাইড, দীর্ঘ ভ্রমণ এবং ক্লাসিক ভিনটেজ স্টাইলের জন্য জনপ্রিয়। এই বাইকটি থেকে আপনি স্ট্যান্ডার্ড মাইলেজ এবং দুর্দান্ত স্পিড পাবেন। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৩৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১১০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন।
রয়্যাল এনফিল্ড মিটিওর ৩৫০
রয়্যাল এনফিল্ড মিটিওর ৩৫০ হলো একটি ডিসেন্ট ডিজাইনের স্মার্ট লুকিং মোটরবাইক। এটি একটি ক্লাসিক রেট্রো স্টাইলের ক্রুইজার টাইপ বাইক। বাইকটি থেকে আপনি খুবই স্মুথ এবং রিলাক্সিং রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স পাবেন। এটির সিগনেচার মার্ক এক্সজস্ট নোট, ক্লাসিক স্টাইলের কনসোল প্যানেল এবং পাওয়ারফুল গোলাকার হেডলাইট ডিজাইনটি আপনাকে মুগ্ধ করবে। ৩৫০ সিসির সিঙ্গেল ওভারহেড ক্যামস্যাফট ইঞ্জিন, ইলেকট্রিক ফুয়েল ইনজেকশন টেকনোলজি এবং ডুয়েল চ্যানেল এবিএসের সমন্বয়ে এটি বাজারে আনা হয়েছে।
বাইকটি রয়্যাল এনফিল্ডের ৩৫০ সিসি রেঞ্জের অন্যান্য মডেলের মতো ৩৪৯সিসি ইঞ্জিন দ্বারা চালিত, যা ৬ হাজার ১০০ আরপিএমে ২০.২বিএইচপির হর্স পাওয়ার এবং ৪০০০ আরপিএমে ২৭ এনএমের টর্ক প্রদান করে।
মোটরসাইকেলটির পরিমার্জিত ইঞ্জিন এবং সুনির্দিষ্ট গিয়ার পরিবর্তন একটি মসৃণ রাইডিং অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এমনকি প্রতি ঘণ্টায় ৯০-১১০ কিমি গতিতেও কোনো কম্পন হবে না। এটিতে একটি স্টিল ফ্রেম, টেলিস্কোপিক ফর্ক ফ্রন্ট সাসপেনশন এবং একটি টুইন সাইড সুইং আর্ম রিয়ার সাসপেনশন আছে।
মোটরসাইকেলটিতে ৩০.১ ইঞ্চি উচ্চতার একটি আরামদায়ক টু-পিস সিট আছে, যা চালক এবং যাত্রী উভয়ের জন্যই আরামদায়ক। সামনের এবং পেছনের উভয় চাকায় স্ট্যান্ডার্ড হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেকের পাশাপাশি অ্যান্টি-লক ব্রেক আছে।
মিটিওর ৩৫০ মোটরসাইকেলটিতে একটি স্ট্যান্ডার্ড স্পিডোমিটার, ট্যাকোমিটার, ট্রিপ ওডোমিটার, কম্পাস এবং নেভিগেশন সিস্টেমসহ ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্টেশন রয়েছে যা চালকদের জন্য উচ্চ স্তরের সুবিধা এবং নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে।
বাইকটি মূলত ক্লাসিক ভিনটেজ স্টাইল এবং রিলাক্স রাইডিং এক্সপেরিয়েন্সের জন্য জনপ্রিয়। তবে বাইকটি স্ট্যান্ডার্ড মাইলেজ এবং দুর্দান্ত স্পিডের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাইকটি থেকে আপনি প্রায় ৩৫ কিমি/লিটার এভারেজ মাইলেজ এবং প্রায় ১২০ কিমি/আওয়ার টপ স্পিড পেতে পারেন।
তথ্য সূত্র : বাইক গাইড
এসএম