হজ প্যাকেজ ৪ লাখ টাকা করার দাবি
হজের প্যাকেজ ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ, বর্তমান পরিস্থিতিসহ পবিত্র রমজান মাসে মজুতদারি, কালোবাজারি বন্ধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, সরকারিভাবে হজ গাইড নিয়োগে কওমি ওলামাদের ক্ষেত্রে চলমান বৈষম্য নিরসন ও কোরবানির পশুর চামড়া প্রতি বর্গফুট গরু ১২০, ছাগল ৭০ টাকা করার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেওয়া স্মারকলিপিতে এসব দাবি তুলে ধরেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের খরচ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। বিশ্বের কয়েকটি দেশের হজ প্যাকেজ হলো- ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন মুসলমানকে হজে যেতে হলে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ টাকা খরচ করতে হবে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। বাকিটা সরকারি ‘হজ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ তহবিল থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। মালয়েশিয়ায় যেসব পরিবারের মাসিক আয় ৯৬ হাজার টাকার কম, সেসব পরিবারের সদস্যদের জন্য হজের খরচ ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা। মাসিক আয় বেশি হলে দিতে হবে দুই লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। দেশটিতে হজের জন্য সরকার বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে থাকে। পাকিস্তানে গত বছরের তুলনায় হজের খরচ ৩৬.৫৯ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ লাখ ৭০ হাজার পাকিস্তানি রূপি যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারতে ২০২১ সালে এই খরচ ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় চার লাখ ২৩ হাজার ৫৭১ টাকা। তবে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, হজ প্যাকেজের খরচ ৫০ হাজার টাকা কমানো হবে। অর্থাৎ সেদেশে হজ কমিটি অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে যারা হজে যাবেন, তাদের খরচ হবে চার লাখ টাকার কম। সিঙ্গাপুরে হজের খরচ গত বছরের তুলনায় প্রায় দেড় হাজার ডলার বেড়েছে। সেখানে সবচেয়ে কম প্যাকেজের জন্য দিতে হবে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা।
বাংলাদেশে গত বছর কোরবানি ছাড়া বেসরকারি ‘সাধারণ’হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তার সঙ্গে কোরবানির টাকা মিলিয়ে বাড়তি খরচ ২ লাখ ছুঁয়ে ফেলবে। এতে একজন হজযাত্রীর খরচ পড়ে কম পক্ষে ৮ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিলের স্মারকলিপিতে বলা হয়, হজের সময় যাত্রীদের কাছ থেকে বিমান ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। আমরা মনে করি, যৌক্তিক ভাড়া ৭০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা উচিত। পৃথিবীর কোনো দেশ হজ মৌসুমে উড়োজাহাজ ভাড়া বাড়ায় না, উল্টো ছাড় দেয়। ব্যতিক্রম বাংলাদেশ বিমান। তারা হজ মৌসুম এলেই বিমান ভাড়া বাড়িয়ে ব্যবসা করে।
এতে আরও বলা হয়, হজ প্যাকেজে বাংলাদেশের সকল ভ্যাট ট্যাক্স বাতিল এবং সাধারণ হজযাত্রীদের খরচ কমানোর স্বার্থে বাড়িভাড়া, মোয়াল্লেম ফিসহ সৌদি আরবের অন্যান্য খরচ কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কুটনৈতিক চেষ্টা চালানো, হজের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে অপ্রয়োজনীয় খরচ ও রাষ্ট্রের টাকায় হজ করানো বন্ধ করা এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দিয়ে হলেও হজের খরচ ৪ লাখ টাকায় পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও মাহে রমজানে মজুতদার, কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ কামনার কথা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।
কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নিয়ে কয়েক বছর ধরে আর একটি সংকট দেশবাসী লক্ষ্য করছে। অন্য সময়ে পশুর চামড়ার মূল্য যেভাবে থাকে কোরবানির সময়ে তার ৩ ভাগের একভাগ থাকে যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অথচ এই কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রিত অর্থ জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি ও মাদ্রাসার এতিম-গরিব শিক্ষার্থীদেরকে দেওয়ার ইসলামের বিধান রয়েছে। কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য কমিয়ে চামড়া সিন্ডিকেট অসহায় গরিবদেরকে ঠকিয়ে অর্থের পাহাড় গড়তে মরিয়া হয়ে আছে। তাই কোরবানির পশুর চামড়া প্রতি বর্গফুট গরু ১২০, ছাগল ৭০ টাকা নির্ধারণ করতে এখন থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়।
সরকারিভাবে হজ গাইড নিয়োগের ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষিত অভিজ্ঞ আলেম ওলামারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, এক্ষেত্রে এখন থেকে তারা যাতে বৈষম্যের স্বীকার না হন সে জন্য উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
এআর/এমএ