চলবে না দূরপাল্লার বাস-ট্রেন-লঞ্চ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধ ১৬ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বেড়েছে। রোববার (১৬ মে) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ঈদের পর দূরপাল্লার বাস ছাড়ার অনুমোদন দেয়নি সরকার। ফলে বিধিনিষেধকালে ২৩ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকছে দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল। তবে এ সময় জেলার মধ্যে আগের মতোই গণপরিবহন চলাচল করবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্তঃজেলা বাস, যাত্রীবাহী ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল করবে কি না তা ১৭ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
# আবার আন্দোলনে যাবার ছক সড়ক পরিবহন নেতাদের
# সোমবার পরিবহন নেতারা চিঠি দেবেন তিন মন্ত্রণালয়ে
# দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পাওয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
সর্বশেষ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল বিধিনিষেধের মেয়াদ। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তার ওপর করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরনের সন্ধান পাওয়ায় দেশে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও উদ্বিগ্ন।
আরও পড়ুন : ২৩ মে পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
এদিকে দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি না দেওয়ায় ঈদুল ফিতরের দিন রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। ঈদ শেষে এখনও যদি দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয় তাহলে তারা আবার আন্দোলনে যাবেন।
আরও পড়ুন : পাটুরিয়ায় ঢাকামুখী মানুষের চাপ, চলছে ১৬ ফেরি
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদে বাড়ি যাওয়া যাত্রীদের ঢাকায় ফেরার জন্য দূরপাল্লার বাস চালু করা উচিত ছিল। তা না করায় আমরা আবার আন্দোলনে যাব। তার আগে আমরা সোমবার সড়কমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর কাছে আমাদের পাঁচটি দাবি সম্বলিত চিঠি দেব। কাজ না হলে আমরা প্রতীকী অনশন, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করব সারাদেশে।
আরও পড়ুন : সিরাজগঞ্জে মহাসড়কে চলছে দূরপাল্লার বাস
মূলত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস চলাচলের অনুমতি পেতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারে ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূরপাল্লার গণপরিবহন চালু হলে করোনা সংক্রমণ বাড়বে। এ বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকরাও একমত। কিন্তু পরিবহন খাতের শীর্ষ নেতাদের আহ্বানে দূরপাল্লার বাস চালুর দাবিতে গত শুক্রবার (১৪ মে) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে পরিবহন শ্রমিকরা বিভিন্ন বাস ও ট্রাক টার্মিনালে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
সড়ক পরিবহন খাতের নেতারা বলছেন, করোনায় বিধিনিষেধের মধ্যেও মার্কেট, শপিংমলসহ সব কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গণপরিবহন চালুর ক্ষেত্রে নানা তালবাহানা চলছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিক।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বার বার দাবি জানিয়েছি। সরকার দূরপাল্লার গণপরিবহন চালু না করলে জনভোগান্তি বাড়বে। বাস না ছাড়লে ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহনে তারা গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরবে। তাতে কি করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে?
সড়ক পরিবহন খাতের পাঁচ দাবি
পরিবহন খাতের নেতারা পাঁচটি দাবি আদায়ের জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চাপ দিচ্ছেন। তার মধ্যে প্রথমটি হলো- স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার পরিবহনসহ সব গণপরিবহন এবং স্বাভাবিক পণ্যবাহী পরিবহন চলাচলের সুযোগ দিতে হবে।
তাদের দ্বিতীয় দাবি– লকডাউনের কারণে কর্মহীন সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের ঈদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা ও লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মালিকদের যানবাহন মেরামত, কর্মচারী ও শ্রমিকের বেতন, ভাতা ও বোনাস ইত্যাদি দেওয়ার জন্য নামমাত্র সুদ ও সহজ শর্তে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিতে হবে।
তাদের তৃতীয় দাবি হলো– সারা দেশে বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোয় পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় ওএমএসের চাল বিক্রির ব্যবস্থা করা।
এছাড়া তাদের চতুর্থ দাবি– কোভিড-১৯ এর কারণে গণপরিবহন ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগের বিপরীতে সব ব্যাংক ঋণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফসহ কিস্তি চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা। পাশাপাশি ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে শ্রেণিকৃত ঋণগুলো নিয়মিত করার সুযোগ দিতে হবে।
তাদের পঞ্চম দাবি হলো– বিধিনিষেধে বন্ধ থাকার সময় গাড়ির ট্যাক্স-টোকেন, রুট পারমিট ফি, আয়করসহ সব ধরনের ফি, কর ও জরিমানা মওকুফ করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাগজপত্র হালনাগাদের সুযোগ দিতে হবে।
যাত্রীবাহী ট্রেন, লঞ্চ চলবে না
এদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালনা) শাহাদাত আলী সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, ১৭ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে না। তারপর হয়তো স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের অনুমতি দিতে পারে সরকার। আমরা সরকারি আদেশ পেলে যেকোনো সময় যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনার জন্য প্রস্ততি নিয়ে রেখেছি। রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কাজের অংশ হিসেবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গণপরিবহন হওয়ায় বিধিনিষেধ চলাকালে আগের মতোই লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
পিএসডি/এইচকে