নোয়াখালীতে পুলিশ হত্যা মামলা : গ্রেপ্তার তিনজন সমন্বয়ক নন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন সমন্বয়ক তো নন, তারা এমনকি নিয়মিত আন্দোলনকারীও ছিলেন না।
গতকাল রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি পোস্ট করে এমন মন্তব্য করেন।
সারজিস আলম পোস্টে বলেন, গ্রেপ্তার ছেলেগুলো স্থানীয় কিশোর গ্যাং বুলেট গ্যাংয়ের সদস্য। তাদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটলেও নামের সামনে ‘বুলেট’ ট্যাগ দেখা গেছে।
সারজিস আলম পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘যে তিনজন ছেলেকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে কথা হচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করার মূল কারণ ছিল, তাদের মধ্যে একজন সেদিনের লুট করা অবৈধ অস্ত্রসহ টিকটকে পোস্ট দেয় ভাব নেওয়ার জন্য। সেই ছবি দেখে স্থানীয় জনতাসহ অনেকেই পুলিশকে অবহিত করেন এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সেই ছেলে আরও দুজনের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে এবং এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার বিভিন্ন এভিডেন্স তাদের কথায় ও ফোন মেসেজিংয়ে পায়।’
আরও পড়ুন
এই ফেসবুক পোস্টে পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার বিষয়েও কথা বলেছেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘এখনো বিভিন্ন থানায় কিছু পুলিশ সদস্যের টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মিথ্যা মামলায় চাপ প্রয়োগের কথা শোনা যাচ্ছে। এত রক্তপাত আর জীবনের বিনিময়ের পরও যে কালপ্রিটরা এখনো ঘুষ খায়, তারা শহীদের রক্তকে কলঙ্কিত করছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশের ওপর দেশের জনগণ আস্থা রাখতে চায়। তবে সেই আস্থা নিজেদের কাজের মাধ্যমে পুলিশকেই ফিরিয়ে আনতে হবে।’
এর আগে শনিবার (১২ অক্টোবর) পুলিশ সদস্য ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় তিন কিশোর ও তরুণকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন, সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাপুয়া গ্রামের ছিদ্দিকের ছেলে নাইম হোসেন (২১), ১ নম্বর ওয়ার্ডের কৌশল্যারবাগ গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে নাহিদুল ইসলাম (১৬) ও জয়াগ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভাওরকোট গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে ইমাম হোসেন ইমন (২২)।
জেলা পুলিশ সুপার বলন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুষ্কৃতকারীরা সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে পুলিশ সদস্য কনস্টেবল ইব্রাহিমকে পিটিয়ে এবং সাব-ইন্সপেক্টর বাছিরকে জবাই করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছিলাম। এর মাঝে ফেসবুকে আগ্নেয়াস্ত্রেরসহ পোস্ট দেখে আমরা তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা আদালতে পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনা শিকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
আব্দুল্লাহ-আল-ফারুক আরও বলেন, মূলত আমরা ওই ছবি দেখে ওই পুলিশ সদস্য হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছি। সেটি হলো গ্রেপ্তারকৃত নাইম ফেসবুকে থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রসহ ছবি দেয়। সেই ছবির সূত্র ধরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর তার কাছ থেকে নিহত পুলিশ সদস্যের দুইটি স্মার্ট ফোন উদ্ধার করা হয় এবং এ ঘটনায় জড়িত আরও ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘সেদিন (৫ আগস্ট) দুষ্কৃতকারীরা থানায় হামলা চালালে প্রাণ ভয়ে কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিম পুলিশের সরকারী বরাদ্দকৃত নীল রংয়ের টি শার্ট পরিহিত অবস্থায় সীমানা প্রাচীরের নীচ দিয়ে টিনের বেড়ার ফাঁকে বের হওয়ার সময় গ্রেপ্তারকৃত নাহিদুল ইসলাম তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাধা দিয়ে ‘এইতো পুলিশ’ বলে মারধর শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে আসামি ইমাম হোসেন ইমন দৌড়ে এসে লাঠি দিয়ে স্বজোরে হত্যার উদ্দেশ্যে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মাথার পেছনে ৫/৬টি আঘাত করে। এতে ইব্রাহিম গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর সকলে একযোগে হত্যার উদ্দেশ্যে সারা শরীরে আরও উপর্যুপুরি আঘাত করে।’
পুলিশ সুপার আরও বলেন, কনস্টেবল ইব্রাহিমের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে আসামি নাইম হোসেন ইব্রাহিমের পকেট থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল, আইডি কার্ড ও টাকা সম্বলিত ম্যানিব্যাগ নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে পুনরায় আসামিরা উপর্যুপুরি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং তাকে চার হাত পা ধরে ঝুলিয়ে রাস্তায় নিয়ে টেনে হিছড়ে সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত করার মাধ্যমে রেলক্রসিংয়ে কাছাকাছি রেখে উল্লাসে মত্ত হয়। আসামি ইমাম হোসেন মোবাইল ও টাকা ভাগ চাইলে আসামি নাইম হোসেন তাকে পরে যোগাযোগের কথা বলে ইমাম হোসেনের মোবাইল নাম্বারে নিজ নাম্বার হতে কল করে। তদন্তকালে সকল প্রমাণাদির মিল পাওয়া গেছে। এছাড়াও আসামিরা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
এমএ