জেলে ঢুকেছেন হেভিওয়েটরা, বেরিয়েছেনও অনেকে
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অবসান ঘটে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী অপশাসনের। এরপর গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে এই সরকারের দুই মাস পূর্ণ হয়েছে।
এ দুই মাসে অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে জুলাই গণহত্যার অভিযোগে বিগত সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রী, এমপি, পুলিশ কর্মকর্তা ও আমলাদের গ্রেপ্তার করার বিষয়টি রয়েছে। আবার এই সরকার আসার পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গেছেন বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সদস্য। জেলে ঢোকানো আর বের করার এসব ঘটনা বেশ আলোচনায় আসে।
দুই মাসে জেলে ঢুকেছেন যেসব হেভিওয়েটরা
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাপুটে বহু কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের কেউ এখন কারাগারে আছেন, কেউ আছেন রিমান্ডে।
এ তালিকায় আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামছুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক পনিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ আরও অনেকে।
আরও পড়ুন
এছাড়া, গুম ও খুনের দায়ে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে রয়েছেন আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ অনেক সরকারি আমলা। যাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, এডিসি কাফী ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহায়েল।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চার মন্ত্রী ও তিন প্রতিমন্ত্রী কারাগারে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া, কারাগারে বিশেষ ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন সাবেক সরকারদলীয় এমপি, অন্যান্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক ৪৯ জন কর্মকর্তা।
যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিনে মুক্ত হয়েছেন
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দুই মাসে অনেক আলোচিত মামলার আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম ও সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানি।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আরও পাঁজজন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এরা হলেন সানজিদুল ইসলাম ইমন ওরফে কলাবাগান ইমন, আব্বাস, টিটন, পিচ্চি হেলাল, ফ্রিডম রাসু। তাদের বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজি, ভাঙচুর ও দখলবাজির অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, আলোচিত মোট ৪৩ জন বন্দি এখন পর্যন্ত কারাগার থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হয়েছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শীর্ষ জঙ্গিরা এসব মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে ছিলেন।
কর্মস্থলে না ফেরা কর্মকর্তাদের খুঁজছে পুলিশ
বর্তমান সরকারের দুই মাস পূর্ণ হলেও অনেক পুলিশ সদস্য এখনো কাজে ফেরেননি। আবার অনেক সমালোচিত পুলিশ সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশের রাজনৈতিক ভূমিকা ও ব্যাপক দমন-পীড়নের কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা বলপ্রয়োগে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তবে, অভিযুক্ত অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই এখনো পলাতক আছেন। তারা গ্রেপ্তারের ভয়ে চাকরিতে যোগ দেননি।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের আল্টিমেটাম সত্ত্বেও এখনো কাজে যোগ দেননি আওয়ামী লীগের আমলের অনেক প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা। পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা এসব কর্মকর্তাদের ‘অপরাধী’ হিসেবে খোঁজা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে গত ১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনও যোগদান করেননি তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের আমরা পুলিশ বলব না, তাদের ক্রিমিনাল বলব। আমরা নতুন করে আনসার, পুলিশ ও বিজিবি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এমএসি/কেএ