ঢাকায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা, হত্যার অভিযোগ আরও ৪টি
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকায় আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলা করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সোহেল নামে এক যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলাটি করেন সোহেলের স্ত্রী সুমি খাতুন।
এ ছাড়া আন্দোলনে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলার আবেদন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে জমা পড়েছে। থানায় এ চার মামলা হয়েছে কি না, সেটি জানানোর জন্য ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশ প্রতিবেদন আসার পর মামলা গ্রহণের বিষয়ে আদেশ দেবেন আদালত।
মোহাম্মদপুরে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাদশা (৪০) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন জমা পড়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে আজ এ আবেদন করেন বাদশার বাবা ফিরোজ। বাদশার মৃত্যুর ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে ওসিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত।
আরও পড়ুন
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ৪ আগস্ট বিকেলে মোহাম্মদপুরের ময়ূর ভিলার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবিদ্ধ হন বাদশা। পরে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৭ আগস্ট তিনি মারা যান। শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানকে আসামি করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলি করে হত্যা
আবদুল হান্নান নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৩৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন জমা পড়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে এ আবেদন করেন হান্নানের শ্যালক দিপুকুল ইসলাম। এ নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, সেটি ৭ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
মামলার আবেদনে দাবি করা হয়েছে, ৫ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার চৌরাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিতে আবদুল হান্নান গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলার আবেদনে শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, মশিউর রহমান মোল্লা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।
ভাটারায় যুবককে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর ভাটারা এলাকায় সোহাগ নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২০৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। সোহাগের মা মনির হোসেন এ আবেদন জমা দেন। এ–সংক্রান্ত মামলা থানায় হয়েছে কি না, সেটি প্রতিবেদন আকারে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ওসিকে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার আরজিতে দাবি করা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই দুপুরে ভাটারার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার মিছিল চলছিল। তখন পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অন্যরা মিছিলে গুলি ছোড়ে। তখন মিছিলে থাকা সোহাগ গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শিক্ষার্থীকে শাহবাগে গুলি করে হত্যা
নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৭৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে এ আবেদন করেন মানিকের খালাতো ভাই রাজু আহমেদ। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না, সেটি সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয়, মানিক মুন্সিগঞ্জ জেলার সমন্বয়কদের একজন ছিলেন। তিনি মীরকাদিম পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্যসচিব ছিলেন।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে যোগ দিতে ৫ আগস্ট সকালে মুন্সিগঞ্জ থেকে চাঁনখারপুলে আসেন শিক্ষার্থী মানিক মিয়া। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ, সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান ও সাবেক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসকে আসামি করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ঢাকার আদালতে। এর পর থেকে তার বিরুদ্ধে অন্তত ২১০টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৮১টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এমএ