ব্রুনাই প্রবাসীদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় যা বলছে হাইকমিশন
বাংলাদেশি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের রেমিট্যান্স এট সেকেন্ডস কর্তৃক টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বক্তব্য প্রদান করেছে ব্রুনাইয়ের বাংলাদেশ হাইকমিশন।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে হাইকমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্রুনাইয়ে প্রায় ১৫-২০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী অনেক বছর ধরে সুনামের সাথে কর্মরত রয়েছেন এবং দেশে রেমিটেন্স প্রেরণ করে আসছেন। সাধারণত ব্যাংক ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিভিন্ন রেমিটেন্স হাউসে মাধ্যমেই ব্রুনাই থেকে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। তবে, ব্যাংকের তুলনায় সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিভিন্ন রেমিটেন্স হাউসের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করতেই সাধারণ কর্মীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বৈধ পথে অর্থ প্রেরণের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্রুনাইয়ে অবস্থিত। তার কয়েকটি বৈধ এজেন্টের মাধ্যমে অনেক বাংলাদেশি কর্মী অর্থ প্রেরণ করে আসছেন। ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানের প্রাণকেন্দ্রে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের এজেন্ট রেমিট্যান্স এট সেকেন্ডসের মাধ্যমে ব্রুনাই প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি আগস্ট মাসে অর্থ প্রেরণ করেন। তবে, গত ২৮ আগস্ট রাতে কয়েকজন বাংলাদেশির তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন অবহিত হয় যে, রেমিট্যান্স এট এজেন্টের মাধ্যমে কয়েকজন প্রতারিত হয়েছেন।
গত ৩১ জুলাই থেকে ২৭ আগস্ট এজেন্টের এক কর্মচারী (নাজওয়া) অফিস চলাকালে তার নির্ধারিত কাউন্টারে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক কর্তৃক প্রদানকৃত অর্থ সঠিকভাবে জমা গ্রহণ না করেই তাকে ভুয়া রিসিপ্ট প্রিন্ট করে দেন। পরবর্তী সময়ে আদায়কৃত অর্থ আত্মসাৎ করে এবং ২৮ আগস্ট থেকে নিখোঁজ হয়ে যা। এই মধ্যবর্তী সময়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি তাদের প্রেরিত অর্থ ঠিক সময়ে না পৌঁছানোর বিষয়ে রেমিট্যান্স হাউজে খোঁজ নেন।
বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। কারণ এ পর্যন্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের অভিযোগ রেজিস্ট্রার অনুযায়ী ১১৬ জন কর্মীর অভিযোগ (পুলিশ প্রতিবেদনসহ) জমা হয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ ২৩ হাজার ব্রুনাই ডলার (৬ কোটি টাকা এর বেশি)। রেমিটেন্স হাউসসমূহের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্রুনাই দারুসসালাম সেন্ট্রাল ব্যাংকের সাথে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। রেমিট্যান্স এট সেকেন্ডসের মালিক পক্ষের সাথেও সভা করা হয়।
সেন্ট্রাল ব্যাংকের পরামর্শক্রমে ভুক্তভোগী বাংলাদেশি কর্মীদের নিকটস্থ থানায় পুলিশ রিপোর্ট করে তা রেমিটেন্স হাউস এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিতে অনুরোধ জানানো হয়। এই বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত পুলিশ স্টেশন এবং হাইকমিশনারের নেতৃত্বে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয় যাতে প্রকৃত ভুক্তভোগী বাংলাদেশি নাগরিক অচিরেই তাদের অর্থ ফেরত পান।
এদিকে, ভুক্তভোগী বাংলাদেশি কর্মীরা প্রতিদিন অর্থ প্রাপ্তির বিষয়ে তথ্য জানতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমায়েত হচ্ছেন। ভুক্তভোগী কর্মীদের সহায়তায় অত্র কার্যালয়ের কাউন্সেলর তন্ময় মজুমদার, যিনি নিজেও এই ঘটনায় প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি রেমিট্যান্স এজেন্টের অফিসে কয়েকজন কর্মীসহ পরিদর্শন করেন। অর্থ প্রাপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে এজেন্ট কর্তৃপক্ষ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত কর্মচারীকে অর্থ প্রদান করা হয়েছে, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নকে নয়- এমন জাতীয় বক্তব্য প্রদান করে তাদের দায় এড়িয়ে যেতে চায়। এতে উপস্থিত বাংলাদেশি কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। যার পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাজেন্ট কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও আইনজীবীকে খবর দেন। ঘটনার গভীরতা বিবেচনায় তন্ময় মজুমদার ভুক্তভোগী বাংলাদেশি কর্মীসহ পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ শাখা প্রধানের সাথে কথা বলেন এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ব্রুনাইয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।
এদিকে, ভুক্তভোগী বাংলাদেশিরা প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ হাইকমিশনে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত প্রাপ্তির জন্য খোঁজ নিচ্ছেন। ব্রুনাইয়ের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই কয়েকজন বাংলাদেশি মত প্রকাশ করেন যে, আলোচিত ঘটনায় ব্রুনাই সরকার অভিযুক্ত নারীকে গ্রেপ্তার ও পরবর্তী কার্যক্রমে গুরুত্ব দিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। তবে, যেহেতু উক্ত অভিযুক্ত ইতোমধ্যে ব্রুনাই ত্যাগ করেছেন, তাই সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে অচিরেই অর্থ ফেরত প্রাপ্তি বা আদৌ অর্থ ফেরত প্রাপ্তির আশা করা দুরূহ। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সদর দপ্তরে ঘটনা অবহিত করার বিষয়ে অনুরোধ জানান।
ওএফএ/কেএ