নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে ‘সিডও’ সনদের অনুমোদন ও বাস্তবায়ন দাবি
দেশের সব নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনের জন্য ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ’ (সিডও) অনুমোদন ও বাস্তবায়ন দাবি জানিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। সংগঠনটির ব্যানারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, স্টেপস টুয়াডর্স ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ এবং ব্র্যাক সম্মিলিতভাবে এই দাবি জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে তারা এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এতে উপস্থিত অতিথিরা বলেন, আজ (৩ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক সিডও দিবস। ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সিডও সনদে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের সই করার মধ্য দিয়ে সনদটি কার্যকর হতে শুরু করে। বাংলাদেশের নারী সমাজের কাছে এই দিনটির তাৎপর্য গভীর। বাংলাদেশের নারীরা যেমন দেশের ভেতরে তাদের অধিকারের জন্য লড়েছেন, তেমনি বৈশ্বিক নারী আন্দোলনের সঙ্গেও নিজেদের যুক্ত করেছেন। যে মুক্তিযুদ্ধের আগেই ১৯৬৭ সনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপের নীতিমালা প্রণীত হলেও প্রায় এক যুগ পরে ১৯৭৯ সালে সিডও সনদ গৃহীত হয়। সিডও কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, ১৯৯২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ প্রস্তাব ১৯ এবং পরবর্তীতে সাধারণ প্রস্তাব ৩৫ গৃহীত হয়। যেখানে বলা হয়, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা নারীর প্রতি বৈষম্যের একটি ধরণ যা নারীর অধিকার এবং স্বাধীনতার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
তারা বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ এবং সমতা প্রতিষ্ঠায় সুনির্দিষ্ট নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করতে হবে। সেজন্য নারী এবং শিশুদের প্রতি সকল প্রকার যৌন সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি বন্ধে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সেগুলো হচ্ছে —
১. জাতিসংঘ সিডও কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সিডও সনদের ২ ও ১৬.১ (গ) ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে সিডও সনদের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইনের সংস্কার করে সম্পদ-সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সংবিধানে জনজীবন ও ব্যক্তি জীবনে অধিকারের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য আছে তা দূর করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৪. সমকাজে সমমজুরি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর গৃহকর্মের এবং সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নারী শ্রমিকদের জন্য মজুরি কাঠামো তৈরি করতে হবে।
৫. নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে শূন্য সহিষ্ণুতা ঘোষণা করতে হবে। সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যার সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিচারের দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৬. উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ পৃথক পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৭. বাল্যবিবাহ বন্ধে আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৮. সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার সব পর্যায়ে নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ পরিবর্তনের লক্ষ্যে নারীর মর্যাদা ও মানবাধিকারের প্রতি সংবেদনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমের নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০. সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
আরএইচটি/জেডএস