‘উধাও’ পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের গাড়ির খবরে লেকসিটিতে অভিযান
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আলোচিত সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ‘গাড়ি রাখা আছে’, এমন তথ্যে রাজধানীর খিলক্ষেতে ‘লেকসিটি কনকর্ড’ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
প্রায় ২ ঘণ্টার অভিযানে একটি সাদা মাইক্রোবাসের সন্ধান পাওয়া গেলেও গাড়িটির মালিককে পাওয়া যায়নি। পরে গাড়িটি নিয়ে চলে যান অভিযানে থাকা সেনা সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে লেকসিটি কনকর্ডের বর্ণালী ভবনের নিচের গ্যারেজ থেকে গাড়িটি নিয়ে যান তারা।
চাকরিতে কোটার সংস্কার চেয়ে মাঠে নেমেছিল শিক্ষার্থীদের গড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই আন্দোলন দমাতে শুরু থেকে মারমুখী ছিল পুলিশ। ছাত্রদের সেই আন্দোলন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক দমন-নিপীড়ন আর ধরপাকড়ে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। কোটার আন্দোলন গিয়ে ঠেকে এক দফার সরকার পতনের আন্দোলনে।
সেই আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগে ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরই তার সরকারের মেয়াদে দাপুটে হিসেবে পরিচিত পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের আটক হওয়ার খবর চাউর হয়। কিন্তু পরদিন তিনি নিজেই আটক হওয়ার খবরটি নাকচ করে দেন। এরপর থেকে একরকম ‘উধাও’ এ কর্মকর্তা। পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পুলিশের প্রভাবশালীদের সঙ্গে একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে হারুনকেও। তবে এখন তিনি কোথায় আছেন এ নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
এর মধ্যে আজ কে বা কারা সেনাবাহিনীকে খবর দেন- খিলক্ষেত লেকসিটি কনকর্ডের বর্ণালী ভবনের নিচে হারুনের একটি গাড়ি রাখা আছে। খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে যান সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
আরও পড়ুন
প্রায় ২ ঘণ্টার অভিযানে ওই ভবনের নিচে একটি সাদা মাইক্রোবাসের সন্ধান পান সেনা সদস্যরা, যেটিকে ভবনের কেউই ‘নিজের গাড়ি’ বলে দাবি করেননি। পরে সেনা সদস্যরা দুপুর ২টার দিকে গাড়িটি নিয়ে চলে যান।
বর্ণালী ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মো. মোশারফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, কেউ খবর দিয়েছে এখানে ডিবি হারুনের গাড়ি রাখা আছে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে একটি সাদা মাইক্রোবাস পান। পরে তাদের লোকজনই গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে চলে যান।
এসময় সেনা সদস্যরা গ্যারেজের একজনকে গাড়ির সঙ্গে নিয়ে গেছেন দাবি করে তিনি বলেন, শুনেছি গাড়িটি ৮-১০ দিন আগে কেউ এনে গ্যারেজে রেখেছে। কিন্তু গাড়িটি নিজের বলে ভবনের কেউ দাবি করেনি।
গাড়ির মালিক পাওয়া না গেলে চালিয়ে নেওয়ার জন্য চাবি কোথায় পেল– জানতে চাইলে এ বিষয়ে কিছু না বলে মোশারফ জানান, অভিযানে সেনা সদস্যরা ভবনের নিচে গাড়ির গ্যারেজেই ছিলেন, উপরে কোনো বাসায় তল্লাশি করেননি।
এদিকে, অভিযানে গাড়ি জব্দ ও কাউকে আটকের বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিএমপির ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে ভাত খাওয়ানো এবং সেসব ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে বেশ আলোচনায় ছিলেন।
সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে নিরাপত্তা দিতে তার কার্যালয়ে কয়েকদিন আটকে রাখেন তিনি। তাদের আপ্যায়ন করার কয়েকটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলে আবার আলোচনার সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ডিবি অফিসে যাকে-তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না।
এরপর গত ৩১ জুলাই তাকে ডিবি থেকে ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগে বদল করা হয়।
জেইউ/এসএসএইচ