বনানী কবরস্থানে এমন ‘১৫ আগস্ট’ আসেনি বহুদিন
বিগত ১৫ বছর ধরে প্রতিবছর ১৫ আগস্টের সকাল থেকে মানুষের পা ফেলার জায়গা থাকতো না বনানী কবরস্থানে। শ্রদ্ধা, ফুলের ডালা, প্রার্থনায় সামিল হতে দলে দলে মানুষের ঢল নামতো এই কবরস্থানে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের দাফন করা হয়েছিল এই কবরস্থানে।
সে কারণে প্রতিবছর ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগসহ তার অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তর, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসতেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু এ বছর চিরচেনা দৃশ্যপট নেই বনানী কবরস্থানে।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে বনানী কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায় দলীয় নেতাকর্মীদের আনাগোনা নেই, সুনসান নীরবতা পুরো কবরস্থান জুড়ে, যেমন থাকে বছরের বাকি দিনগুলোতেও। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের কবরগুলো অন্যান্য বছর ১৫ আগস্ট ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হতো। তবে এ বছর কবরগুলোতে নেই একটি ফুলের ডালাও। কোনো নেতা-কর্মীর উপস্থিতিও নেই। মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে দুই-একজন কবর জিয়ারত করতে ঢুকে আবার বের হয়ে যাচ্ছেন।
বনানী কবরস্থানে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন খোরশেদ আলম নামে একজন কর্মী। তিনি আজকের বনানী করবস্থানের দৃশ্যপটের বর্ণনা করে বলেন, অন্যান্য বছর এই ১৫ আগস্টের দিনে বনানী করবস্থানে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যেত না। কিন্তু আজ কোনো নেতাকর্মীকে এখানে আসতে দেখিনি। কবরগুলোতে অন্যান্য বছর ফুলের ডালার স্তুপ পড়ে যেত, কিন্তু এবার কবরগুলোতে একটিও ফুল নেই।
একই ধরনের কথা বলেন কবরস্থানের বাইরে চায়ের দোকানি খোকন আহমেদ। তিনি বলেন, সকাল থেকে বনানী করবস্থানে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মীকে আসতে দেখেনি। অন্যান্যবার বাইরে এখানে গাড়ির পার্কিং করার জায়গা থাকতো না, ভোর বেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী এখানে আসতো। কিন্তু আজ কোনো ভিড় নেই।
১৯৭৫ সালের এই দিনে এক দল বিপথগামী সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবার হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও এই দিনে তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব; তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল; পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, সামরিক সচিব জামিলউদ্দিন আহমেদ, এসবি কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও হত্যা করে ঘাতকেরা।
দীর্ঘদিন ধরে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরসঙ্গে আড়ালে চলে যান শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরিবর্তিত দৃশ্যপটে সারা দেশে আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পর্যন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য।
আরও পড়ুন
এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে দেশ ছাড়েন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া, অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। ফলে আগস্ট জুড়ে ঘোষিত শোকের মাসের কর্মসূচিগুলো আর হয়নি। একইভাবে আজ বনানীর করবস্থানে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়নি।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। গতকাল ভারত থেকেই দেওয়া শেখ হাসিনার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বিবৃতিতে শেখ হাসিনা যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস পালন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এএসএস/এনএফ