পিটার হাসকে হুমকিদাতা সেই চেয়ারম্যানের সম্পদ ক্রোকের আদেশ
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে মারধরের হুমকি দেওয়া চট্টগ্রামের সেই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী সাহেদা বেগমের ‘অবৈধভাবে অর্জিত’ স্থাবর সম্পদ জব্দের (ক্রোক) আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ২৮ জুলাই বাঁশখালী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানান দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম।
এর আগে, একই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বাদী হয়ে মুজিবুলের দু’টি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে একটি মামলায় মুজিবুলের পাশাপাশি তার স্ত্রীকে আসামি করা হয়।
মামলার পর মুজিবুলের ৬৭ লাখ ১৩ হাজার ৫৯১ টাকা এবং তার স্ত্রী সাহেদার ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ৬২২ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ জব্দে আদালতে আবেদন করেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালত এ আদেশ দেন।
দুদকের দায়ের করা একটি মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামি মুজিবুল জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ১৪ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর অর্জন করে ভোগ-দখলে রেখেছেন। এটি দুদক আইনের ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অন্য মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মুজিবুলের স্ত্রী সাহেদা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৮৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ টাকার সম্পদ উপার্জন করে ভোগ-দখলে রেখেছেন। এটি দুদক আইনের ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দ্বিতীয় মামলায় স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদ উপার্জনে সহযোগিতা করায় মুজিবুলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১০৯ ধারার অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়।
গত ৬ নভেম্বর বাঁশখালীর এক জনসভায় মুজিবুল হক চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হুমকি দেন। ওই সমাবেশে তিনি বলেন, পিটার হাস বলছেন, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। পিটার হাস আমরা আপনাকে ভয় পাই না। আমরা মোটা চালের ভাত খাই। আপনি বিএনপির ভগবান। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ ইমান বেচি না। আপনাকে এমন মারা মারব, বাঙালি কত দুষ্টু তখন বুঝতে পারবেন।
এই অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে এবং ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সালাউদ্দিনের আদালতে আলাদা মামলার আবেদন করা হয়। তবে, দু’বারই মামলার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।
গত বছরের ২৮ মে চেয়ারম্যান নির্বাচনের সময় ইভিএম নিয়ে মুজিবুলের বিতর্কিত মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় হ্যান্ডমাইকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, রিকশায় করে বা যেভাবে পারেন এসে ভোট দিন। কারণ ইভিএমে ভোট। ইভিএম না হলে সব সিল আমিই মেরে দিতাম, কাউকে খুঁজতাম না। কথা বোঝেননি, ইভিএমে আইডি কার্ড না ঢুকালে ভোট হয় না। হলে ভোট আমি রাতেই নিয়ে নিতাম। তাই আপনাদের কষ্ট করে সেটি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নিয়ে যেতে হবে। মেশিনে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হবে। আপনারা কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট দেবেন। ছাপ দিতে না পারলে সেখানে আমি ছাপ দেওয়ার মানুষ রাখব। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।
এমআর/কেএ