মেট্রোরেল প্রকল্পের ৬৬১ জন করোনায় আক্রান্ত
দেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ। এই প্রকল্পের ট্রেনও ইতোমধ্যে জাপান থেকে ডিপো এলাকা দিয়াবাড়িতে এসেছে। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানোর জন্য ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে করোনাকে কঠিনভাবেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল)।
প্রকল্পের এপ্রিল মাসের অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ শুরুর পর এ যাবত প্রকল্পের কাজে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৬১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসেই করোনায় আক্রান্ত হন ২১৯ ব্যক্তি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এপ্রিল মাসেই সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ মাঠ পর্যায়ের দুটি হাসপাতালের শয্যা বাড়ানোসহ দলবদ্ধ জনবল ২৫ থেকে নামিয়ে ১০ জন করেছে। অর্থাৎ কোনো দলে আগে যেখানে ২৫ জন কর্মী কাজ করতেন সেখানে এখন ১০ জন করে কাজ করছেন।
>এপ্রিলেই আক্রান্ত হন ২১৯ জন
> ঝুঁকি কমাতে মাঠ পর্যায়ের হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো হয়েছে
> দলভুক্ত কর্মী সংখ্যা কমানো হয়েছে
> দেশি-বিদেশি জনবলের টিকা গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে
এ ব্যাপারে অবশ্য ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, আমরা সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি ও সব সরকারি নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। গাবতলী ও পঞ্চবটিতে মাঠ পর্যায়ের হাসপাতাল রয়েছে। তাতে শয্যা বাড়ানো হতে পারে।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পে সব মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার বিদেশি কাজ করছেন। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পে যুক্ত ৩২১ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হন। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই আক্রান্ত অব্যাহত থাকে। ২০২০ সালে সংক্রমণের পর থেকে প্রকল্পে জড়িতরা আক্রান্ত হন। তবে তা চলতি বছরের চেয়ে কম ছিল।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত বছরই প্রকল্পের গাবতলী কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১০ শয্যা ও উত্তরার পঞ্চবটি ইয়ার্ডে ১৪ শয্যার দুটি হাসপাতাল তৈরি করেছিল ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। এবার সংক্রমণ বেড়ে গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জনবলের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে নির্মাণস্থলের কাছে আবাসিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পে যুক্ত বাংলাদেশি জনবলকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশি জনবলের জন্য টিকার ব্যবস্থা করতে গেল ৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন মেগা প্রকল্পেও নির্দেশনাগুলো মানতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য প্রকল্প এলাকায় তৈরি করা হয়েছে আইসোলেশন সেন্টার। তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি অর্থায়নের বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত বিদেশিরা নিজ নিজ দেশে চলে যান। সংক্রমণ কমে এলে তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। মেট্রোরেল প্রকল্পে যুক্ত জাপানি ও ইতালিয় বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মীরাও গত বছর সংক্রমণ শুরুর পর নিজ নিজ দেশে চলে যান। পরে সংক্রমণ কমলে গত আগস্ট থেকে তারা বাংলাদেশে ফিরে কাজে যুক্ত হন। এ বছর গত মার্চের শেষ দিক থেকে করোনায় সংক্রমণ বেড়ে যায়। তাতে এই প্রকল্পে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ২১৯ জন করোনায় আক্রান্ত হন।
এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ২২ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাইকা। বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে প্রকল্পগুলোতে দ্রুত করোনা ছড়িয়ে পড়ছে বলে জাইকার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়। জাইকার আবাসিক প্রতিনিধি হাইকায়া ইউহো অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিবকে চিঠি দেন। চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সচিব ও সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়।
চিঠিতে জাইকার আবাসিক প্রতিনিধি হাইকায়া ইউহো উল্লেখ বলেন, জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোতে নিয়োজিত জনবলের মধ্যে দ্রুত করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে মেট্রোরেল ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাইকা।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, করোনাকালেও প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের দুটি মাঠ হাসপাতাল রয়েছে। এগুলোতে জরুরি অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। একটিতে ১৪ ও অন্যটিতে ১০টি শয্যা রয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। তার মধ্যে ১৪ দশমিক ৪১ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) স্থাপন শেষ করা হয়েছে। উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ৫৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৬৪ শতাংশ।
পিএসডি/ওএফ