সায়েন্সল্যাবে ককটেল বিস্ফোরণ, ঘটনাস্থলে নেই পুলিশ
কোটা বাতিলের এক দফা দাবিতে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন ছয় কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ মুহূর্তে উভয় পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। চলছে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
এক ঘণ্টা ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলেও সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। এরই মধ্যে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।
আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা পোস্টের মেডিকেল প্রতিনিধি জানান, এখন পর্যন্ত ১৩ শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহতরা হলেন- আহতরা হলেন- সাব্বির, হাবিব, কামরুল হাসান, জাহিদ, ইয়াসমিন, হাসান, মিরাজ, আরিফ, লাভলু, এস এম ওসমান গনি, মিদুল, হৃদয় ও নাহিদ।
ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে শুরু করে সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড় পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ ও মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থী রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন। বিপরীত পাশে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ, স্থানীয় ব্যবসায়ী, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন।
আরও পড়ুন
থেমে থেমে তাদের মধ্যে চলছে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় উভয় পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে জানতে নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। শুরুতে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
উল্লেখ্য, রোববার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাতে প্রথমে রোকেয়া হলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভ শেষে হলে ফিরে যান তারা।
একই সময়ে মধ্যরাতে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
একই ইস্যুতে গতকাল সোমবার উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুরের দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এসে অবস্থান নেন কয়েকশ আন্দোলনকারী। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। তবে, তাদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলাদা অনুষ্ঠানে তাদের স্লোগানের ভাষার তীব্র সমালোচনা করেন।
এরপর ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয় ছাত্রলীগ। দুপুর ২টার দিকে তারা বিজয় ৭১ হলসহ বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের বাধা দেন। এ খবরে আন্দোলনকারীরা ছুটে গেলে ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর থেকে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বিকেল ৪টার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এ সময় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠি-সোটা নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। বহু আন্দোলনকারীকে পিটিয়ে আহত করে তারা। তাদের অনেকের মাথা ফেটে যায়। আন্দোলনকারীরা কোথাও কোথাও প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ফলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের অধিকাংশই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন। এ ছাড়া আশপাশের অন্যান্য হাসপাতালেও চিকিৎসা নেন কেউ কেউ।
বিকেল ৫টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সামনে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ফের সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। সেখানে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ উপস্থিত হয়ে ব্যারিকেড দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের থামিয়ে দেন যেন তারা সামনে যেতে না পারে। ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষক ও প্রভোস্ট হলের শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করেন।
অন্যদিকে, রাস্তা থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাবির দোয়েল চত্বর এলাকা থেকে সাঁজোয়া যান নিয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। রাত পৌনে ১০টার দিকে ক্যাম্পাস ছাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রাতেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলার অভিযোগ ওঠে। রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে সেখানে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
এ দিন রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলে রড, স্ট্যাম্প ও লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন রুমে তল্লাশি চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্কের ছড়িয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন। এ দিনও বিভিন্ন স্থান থেকে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
আরএইচটি/এসকেডি