ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান
ডেঙ্গু ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকাসহ কয়েকটি শহরে সীমাবদ্ধ ছিল। দিন দিন মশা বেড়ে যাওয়ায় রোগটি এখন দেশের প্রায় সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করাসহ বিভিন্ন সুপারিশ জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক।
রোববার (১৪ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউর) সাগর-রুনি হলে আয়োজিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান ও করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক প্রোগ্রামে উপস্থাপিত ধারণাপত্র এসব কথা বলা হয়। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পবার নির্বাহী সভাপতি ডা. লেনিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানটি পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক যৌথভাবে আয়োজন করেন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পবা ও বারসিকের পরামর্শ
১. মশা নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে কেন্দ্রীয় ভাবে একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে কাজ করবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনসাধারণকে যুক্ত করতে হবে।
২. মশক নির্মূলে রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ, জিনগত নিয়ন্ত্রণ এবং জৈব নিয়ন্ত্রণ বা বায়োলজিকাল কন্ট্রোলের যুগপৎ এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী বা প্রয়োজনভিত্তিক প্রয়োগ করা।
৩. রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর, পরিবেশবান্ধব মশা বিধ্বংসী ঔষধ প্রয়োগ করা।
৪. স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে পাড়া মহল্লায় সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা। এই কমিটি ডেঙ্গু, করোনা ইত্যাদি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী ভূমিকা রাখবে। প্রয়োজনে তাদেরকে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
৫. সারা দেশে পরপর তিনদিন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্বে মানুষের বাড়িঘর এবং আশপাশের ঝোপঝাড়ে এডিস মশার প্রজননস্থল ও বাসস্থান বিনষ্ট করতে হবে। একইসঙ্গে মশা মারার ঔষধ ছিটানো হবে। একটি বাড়ি বা অফিসও বাদ যাবে না।
৬. প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা প্রতিটি বাড়ির বাসিন্দাদের এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে নিয়মিত সহযোগিতা করবে।
ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় করণীয়
১. প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেঙ্গুর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সহজলভ্য এবং বিনামূল্যে করতে হবে।
২. উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগীর সুচিকিৎসার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা। ঢাকা কেন্দ্রিকতা থেকে বের হয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষ যাতে স্থানীয় চিকিৎসা সেবার উপর আস্থাশীল হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষকে যত্নবান করা।
৩. রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করা।
৪. ডেঙ্গু মোকাবিলায় সর্বস্তরের প্রস্তুতি রাখা।
৫. স্কুলগামী শিশুদের জন্য জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি কিউডেঙ্গা ভ্যাকসিন দ্রুত আনার ব্যবস্থা করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৬--১৬ বছরের শিশুদের জন্য এই ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন ২০২৩ সালে প্রদান করেছে।
৫. প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালকে আইনি বাধ্যবাধকতার আওতায় আনা যেন প্রতিটি ডেঙ্গু পজিটিভ রোগীর তথ্য সঠিক সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার সংস্থাকে জানানো হয়।
পবার সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ড. রুমানা হক, পরিবেশ বিষয়ক বিশিষ্ট লেখক ও বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ প্রমুখ।
ওএফএ/এমএ