হেফাজতের তাণ্ডব ‘অনেক বড় ঘটনা’, তাই তদন্তে দেরি
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডব ‘অনেক বড় ঘটনা’। তাই তদন্তে সময় লাগছে। অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হচ্ছে। মামলার তদন্ত শেষ করতে না পারার আরেকটি কারণ হচ্ছে, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন দোষী সাব্যস্ত না হয়।
বুধবার (৫ মে) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে বায়তুল মোকাররমে ব্যাপক নাশকতা হয়। সেটাকে পুঁজি করে গুজব ছড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাণ্ডবে যারা জড়িত ছিল তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, যুক্তিতর্ক চলছে, সারাদেশে কীভাবে জায়গায় জায়গায় আগুন দেওয়াসহ তাণ্ডব চলেছে তা সবাই দেখেছে।
আরও পড়ুন : হেফাজতের তাণ্ডবের ৪৯ মামলার তদন্তই শেষ হয়নি ৮ বছরে
তিনি বলেন, যারা নাশকতায় জড়িত ছিল, উস্কানি দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে। তবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। কেউ যদি নিরপরাধ হয় তা যেন আমাদের জানানো হয়। সে ব্যাপারে আমরা তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে উদ্যোগ নেব।
২০১৩ সালের তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিষয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, হেফাজত নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কী বলেছেন তা আমরা জানি না। তবে যারা জড়িত ছিলেন বা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে শুধু তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আট বছরেও কেন শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষ করা যায়নি? এমন প্রশ্নের উত্তরে হাফিজ আক্তার বলেন, শাপলা চত্বরের তাণ্ডবের ঘটনা বিশাল। দায়ের করা মামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে দরকার তথ্য উপাত্ত। সেগুলো আমাদের সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে হয়েছে। অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাই করতে হচ্ছে। যে কারণে মামলার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে সময় লাগছে।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, পুলিশের প্রধান কাজ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে যা করা দরকার তা আমরা করবো, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক নাকি অরাজনৈতিকভাবে চলবে সেটা হেফাজতের বিষয়। আমরা চাই না ফের শাপলা চত্বরের মতো তাণ্ডবের ঘটনা ঘটুক। তবে কেউ যদি তাণ্ডব চালায়, জনগণের সম্পদ নষ্ট করে, পুলিশ বা সরকারি কর্মকর্তার ওপর হামলা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন : সাড়ে ৩ ঘণ্টার বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হেফাজতের ৪ দাবি
সম্প্রতি হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। তবে আরও আনুষঙ্গিক তথ্য প্রমাণ দরকার। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর ৬টি পয়েন্ট বন্ধ করে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় হেফাজতে ইসলাম। এ ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল পুরো রাজধানী। সরকারি হিসেবে ওই তাণ্ডবে প্রাণ হারায় ৩৯ জন। এই ঘটনায় সারাদেশে ৮৩টি মামলায় আসামি করা হয় প্রায় ৮৫ হাজার ব্যক্তিকে। ওই সময় গ্রেফতার করা হয় হেফাজত ইসলামের ৮৮ নেতাকে। পরবর্তীতে সরকারের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠলে হেফাজতের সব নেতাই জামিনে ছাড়া পান। মামলারও আর অগ্রগতি হয়নি। দীর্ঘ আট বছর পেরিয়ে গেলে এখনও নিষ্পত্তি হয়নি কোনো মামলা।
জেইউ/এসকেডি