পদ্মা সেতু কেবল বৃহৎ অবকাঠামো নয়, একটি দুঃসাহসী স্বপ্নও
দেশের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু নিছক একটি বৃহৎ অবকাঠামো নয়, এটি দুঃসাহসী এক স্বপ্নের নাম বলে মন্তব্য করেছেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন।
শুক্রবার (৫ জুলাই) পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে সেতু বিভাগ আয়োজিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মনজুর হোসেন বলেন, সর্ববৃহৎ অবকাঠামো পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকার, বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীদের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। দেশের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের আত্মবিশ্বাসের দৃঢ় প্রত্যয়ে ও পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণে দেশীয় জনগণকে কাজে লাগানোর জন্য একটি কোম্পানি গঠন করে পদ্মা সেতু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছি।
তিনি বলেন, গত ৩ জুলাই পর্যন্ত পদ্মা সেতু দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৭ হাজার ১১৭টি যানবাহন চলাচল করেছে। প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ২৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭২৭ টাকা টোল আদায় হয়েছে।
আরও পড়ুন
সেতু সচিব বলেন, সেতু বিভাগ গত দুই বছরে পদ্মা সেতু থেকে আদায় হওয়া টোল থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থ বিভাগকে আটটি কিস্তিতে মোট ১২৬২ কোটি ৬৬ লাখ ৬ হাজার ৫৪৮ টাকা পরিশোধ করেছে। এই টাকা পরিষদের অর্থ হচ্ছে, আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করেছি। সেতু কর্তৃপক্ষ অর্থ বিভাগের কাছ থেকে এই টাকা ঋণ নিয়েছিল। সেই ঋণের টাকাই আমরা ফেরত দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সেই নির্দেশনা অনুসরণ করে আরডিপিপি অনুসারে ৩২ হাজার কোটি ৫১ লাখ টাকা হলেও সেতু বিভাগ, সেতু কর্তৃপক্ষ ও প্রকল্প দপ্তর মিতব্যয়ীতার পরিচয় দিয়ে মোট ১৮৩৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা সাশ্রয় করে পুরো প্রকল্পটি ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৩ লাখ টাকায় গত ৩০ জুন সমাপ্ত করেছে।
সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেতু সচিব বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কর্মকর্তা কর্মচারী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্য, বিদেশি পরামর্শ ও প্রকৌশলী, ও নির্মাণ শ্রমিক সকলেই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এমনকি বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন সময়েও নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই সেতুর কাজ করেছেন তারা। সকলের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। এছাড়া পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের যে জনগণ রয়েছেন, তাদেরও অবদান অপরিসীম। তারা সকলেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। অনেকেই ভিটামাটি ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের কর্মচারী, প্যানেল অব এক্সপার্ট, কনসালটেন্ট, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মচারী, ফোর ম্যান, শ্রমিক, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পুনর্বাসনে সুবিধাভোগী অংশীজনদের প্রতিনিধিরা এই মঞ্চে উপস্থিত আছেন।
প্রকল্প দপ্তরে কর্মরত অবস্থায় থাকা অবস্থায় পাঁচ কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেছেন। সেই সঙ্গে প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় ১৬ জন বাংলাদেশি ও দুইজন বিদেশি নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি প্রকল্পের সমাপ্তিকালে তাদের গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের তাদের এই আত্মত্যাগের ঋণ কখনো শোধ হবে না।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এমএইচএন/এসকেডি