উদ্বোধন হলো বাংলাদেশের নিজস্ব জিপিটি প্ল্যাটফর্ম ‘জি-ব্রেইন’
উদ্বোধন হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক বাংলাদেশের নিজস্ব জিপিটি (জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফরমারস) প্ল্যাটফর্ম ‘জি-ব্রেইন’। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরও সহজলভ্য হয়েছে। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশের সংবিধান, বাজেট এবং স্টার্ট-আপ এই তিনটি জিপিটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘জি-ব্রেইন’ (www.gbrainbd.ai) প্লাটফর্মটি। এছাড়া ভবিষ্যতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ ও এডিপি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জিপিটিও যুক্ত হবে এই প্ল্যাটফর্মটিতে।
বুধবার (৩ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে এই প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অনুষ্ঠানে পলক বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে ডাটা বা তথ্য-উপাত্ত। সেই ডাটা ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা জেনারেটিভ এআই সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বে প্রযুক্তির প্রভাব ও প্রসারের চিত্র বদলে দিয়েছে। বর্তমানে যে দেশ, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে যত সমৃদ্ধ ডাটা ও প্রযুক্তি আছে, সেই প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা দেশ তত বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে এবং দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এআই, ডেটা অ্যানালিটিকস, মেশিন লার্নিংয়ের প্রভাবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াব বলেছেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মারাত্মক ঝুঁকি হচ্ছে, ব্যাপক পরিবর্তন খুব দ্রুত হচ্ছে।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই ব্যাপক পরিবর্তনের সঙ্গে কোনো প্রতিষ্ঠান, দেশ বা জাতি যদি খাপ খাইয়ে নিতে না পারে, তাহলে তারা এই যাত্রা বা সিস্টেম থেকে ছিটকে পড়বে উল্লেখ করে পলক আরও বলেন, আমাদের সাইবার সিকিউরিটি, মেশিন লার্নিং, মাইক্রো ছিপ ডিজাইন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর দক্ষতা ও সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। অন্যথায় শ্রমনির্ভর অর্থনীতির ওপর বেশিদিন টিকে থাকতে পারব না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই বৈশ্বিক অগ্রযাত্রায় আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না; আমরা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জকে জয় করতে চাই। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের গড়ে তুলতে হবে এআই, ডেটা অ্যানালিটিকস ও মেশিন লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ সমৃদ্ধ স্মার্ট ও মেধাবী প্রজন্ম, আর সেই স্মার্ট প্রজন্মই গড়ে তুলবে আমাদের আগামীর উন্নত সমৃদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ।
পলক বলেন, আমরা সম্প্রতি ওরাকলের ক্লাউড ব্যবহার করে বাংলাদেশের নিজস্ব ডাটা সেন্টার স্থাপন করেছি, যেখানে আমাদের দেশের ও নাগরিকের সব ডাটা নিরাপদে সংরক্ষিত থাকবে। আমরা আজ এআই নির্ভর জিপিটি প্ল্যাটফর্ম ‘জি-ব্রেইন’ উদ্বোধন করলাম। ভবিষ্যতে এটা মাইগ্রেট করে আমাদের ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারে হোস্ট করা হবে এবং নিয়মিত আপডেট ও ব্যবহারবান্ধব করা হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমরা পাবলিক-প্রাইভেট-একাডেমিয়া পার্টনারশিপের ভিত্তিতে এই কাজটা করেছি। এআই এর পজিটিভ কেইসের ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটিয়ে সরকারের সকল লক্ষ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে পৌঁছাতে ও স্মার্ট প্রজন্ম গড়ে তুলতে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ ও এডিপি নিয়ে আরও জিপিটি তৈরি করে জি-ব্রেইনকে সমৃদ্ধ করব। সময়ের প্রয়োজন বিবেচনা করে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি নিম্ন মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত এআই-কে একটি বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। পাশাপাশি এআইয়ের ঝুঁকি মোকাবিলায় আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এআই আইনও প্রণয়ন করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরএইচটি/জেডএস