আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগারে রক্ষিত তথ্য হ্যাক করলে কারাদণ্ড
আরকাইভস ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সমন্বিত আইন প্রণয়ন করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘আরকাইভস ও গ্রন্থাগার আইন, ২০২৪’ এর খসড়া তৈরি করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর। খসড়া আইনে আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগারে রক্ষিত তথ্য হ্যাক করলে কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে খসড়ায় বলা হয়েছে, যেহেতু আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর দুটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পরিচালিত এবং জাতীয় আরকাইভসের জন্য প্রণীত বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস আইন, ২০২১ এ জাতীয় গ্রন্থাগার সম্পর্কিত কোনো ধারা নেই এবং বিদ্যমান আরকাইভস আইনকে যুগোপযোগী করে সমন্বিত আইনের আওতায় আরকাইভস ও গ্রন্থাগার পরিচালনা করা আবশ্যক।
এতে আরও বলা হয়, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা, সমতা অর্জন এবং সর্বোপরি একই অধিদপ্তরভুক্ত হওয়ায় আরকাইভস ও গ্রন্থাগারের কার্যনির্বাহ তথা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, স্মার্ট সেবা দেওয়া ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত একটি যুগোপযোগী সমন্বিত আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। সেজন্যই এই আইন করা হচ্ছে।
যদি কোনো ব্যক্তি কোনোভাবে আরকাইভস ও গ্রন্থাগারে রক্ষিত কোনো রেকর্ড, নথিপত্র, গ্রন্থ, পত্রিকা, সাময়িকী, মানচিত্র, পাণ্ডুলিপি বা দলিলপত্র ইত্যাদি আত্মসাৎ করেন, দেশে বা বিদেশে পাচার করেন বা জাতীয় আরকাইভস ভবন ও জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনের বাইরে অসৎ উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করেন, তাহলে তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন
খসড়ার ৩১ নম্বর ধারায় অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এই ধারার উপধারা ১-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি জ্ঞাতসারে জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগারে রক্ষিত কোনো রেকর্ড, নথিপত্র, গ্রন্থ, পত্রিকা, সাময়িকী, মানচিত্র, পাণ্ডুলিপি বা দলিলপত্র ইত্যাদি বিকৃত করেন, দাগান্বিত করেন, ছিঁড়ে ফেলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বা সার্ভারে রক্ষিত তথ্য মুছে ফেলেন বা হ্যাক করেন, তাহলে তিনি অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আরও পড়ুন
উপধারা ২-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনোভাবে আরকাইভস ও গ্রন্থাগারে রক্ষিত কোনো রেকর্ড, নথিপত্র, গ্রন্থ, পত্রিকা, সাময়িকী, মানচিত্র, পাণ্ডুলিপি বা দলিলপত্র ইত্যাদি আত্মসাৎ করেন, দেশে বা বিদেশে পাচার করেন বা জাতীয় আরকাইভস ভবন ও জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনের বাইরে অসৎ উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করেন, তাহলে তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
খসড়ার ১১ নম্বর ধারায় সরকারি রেকর্ড নির্বাচন, শনাক্তকরণ ও জা
জাতীয় আরকাইভসে হস্তান্তর করা সমীচীন অনুরূপ কোনো রেকর্ড বা নথিপত্র জাতীয় আরকাইভসে হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হলে তা একটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে এবং এজন্য অনধিক ২০ হাজার টাকা বা নথির মূল্যের পাঁচগুণ পরিমাণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে
তীয় আরকাইভসে স্থানান্তর প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধারার উপধারা ১-এ বলা হয়েছে, সরকারি রেকর্ড জমা রয়েছে এমন যে কোনো স্থানে মহাপরিচালকের প্রবেশের অধিকার থাকবে এবং এর তালিকা বা তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা করার বা তা জাতীয় আরকাইভসে স্থানান্তর করে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে।
সরকারি অফিস বন্ধ করার ক্ষেত্রে এর দলিলাদির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ পদ্ধতি নিয়ে ১২ নম্বর ধারায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। আর ১৩ নম্বর ধারায় ব্যক্তিগত রেকর্ড জাতীয় আরকাইভসে স্থানান্তর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।
খসড়ার ১৫ নম্বর ধারায় বলা হয়, আইনের অধীন গঠিত যে কোনো তদন্ত কমিশনের সচিব অথবা সরকার থেকে নিয়োজিত কোনো তদন্ত কমিটি, তদন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত সব রেকর্ড, চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির তিন মাসের মধ্যে জাতীয় আরকাইভসে জমা করবে।
যদি কোনো প্রকাশক ধারা ২০ অনুযায়ী পুস্তক, সাময়িকী ও সংবাদপত্র জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য তিনি অনধিক ২০ হাজার টাকা অথবা প্রকাশনার মূল্যের পাঁচগুণ পরিমাণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন
৩১ নম্বর ধারার উপধারা-৩ এ বলা হয়, ধারা ১১, ১২, ১৩ ও ১৫ অনুযায়ী জাতীয় আরকাইভসে হস্তান্তর করা সমীচীন অনুরূপ কোনো রেকর্ড বা নথিপত্র জাতীয় আরকাইভসে হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হলে তা একটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে এবং এজন্য অনধিক ২০ হাজার টাকা বা নথির মূল্যের পাঁচগুণ পরিমাণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
২০ নম্বর ধারায় জাতীয় গ্রন্থাগারে পুস্তক, সাময়িকী ও সংবাদপত্র সরবরাহ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধারার উপধারা ১-এ বলা হয়েছে, ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধিকরণ) আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ২৪ এর বিধানকে ক্ষুণ্ন না করে ভিন্নরূপ কোনো চুক্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রকাশিত পুস্তকের প্রকাশক, প্রকাশনার তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নিজ খরচে উত্তম বাঁধাই বা সেলাই বা স্টিচকৃত, সর্বোত্তম কাগজে মুদ্রিত এবং মূল পুস্তকে মানচিত্র ও চিত্র থাকলে তাসহ দুই কপি জাতীয় গ্রন্থাগারে আবশ্যিকভাবে জমা করবেন; তবে শর্ত থাকে যে, পরবর্তী কোনো সংস্করণে পুস্তকটিতে কোনো তথ্যের সংযোজন বা পরিবর্তন আনা না হলে তা প্রকাশের ক্ষেত্রে এই ধারার বিধান প্রযোজ্য হবে না।
উপধারা ২-এ বলা হয়েছে, ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধিকরণ) আইনের ধারা ২৬ এর বিধানকে ক্ষুণ্ন না করে বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিটি সাময়িকী ও সংবাদপত্রের প্রকাশক নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট সাময়িকী বা সংবাদপত্রের প্রতি সংখ্যা এবং ক্ষেত্রমত বিশেষ সংখ্যা ও ম্যাগাজিনসহ তার একটি কপি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় গ্রন্থাগারে সরবরাহ করবেন। তবে সংরক্ষণের স্বার্থে জাতীয় সংবাদপত্রের প্রকাশকরা সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রের পূর্ণ এক মাসের সংখ্যা উত্তম অবস্থায় একত্রে সরবরাহ করতে পারবেন।
উপধারা ৩-এ বলা হয়েছে, সরকার বা সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের অধীন প্রকাশিত পুস্তক, সাময়িকী বা অনুরূপ প্রকাশনার পাঁচ কপি উহা প্রকাশিত হওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জাতীয় গ্রন্থাগারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, কেবল দাপ্তরিক কার্যে ব্যবহারের জন্য প্রকাশিত প্রকাশনার ক্ষেত্রে এ বিধানগুলো প্রযোজ্য হবে না।
পুস্তক, সাময়িকী ও সংবাদপত্র জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা না দেওয়ার শাস্তি প্রসঙ্গে খসড়ার ৩১ নম্বর ধারার উপধারা ৪-এ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো প্রকাশক ধারা ২০ অনুযায়ী পুস্তক, সাময়িকী ও সংবাদপত্র জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এজন্য তিনি অনধিক ২০ হাজার টাকা অথবা প্রকাশনার মূল্যের পাঁচগুণ পরিমাণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর এ আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে। খসড়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে লিখিত মতামত চাওয়া হয়েছে। খসড়া চূড়ান্তে কাজ চলছে।
এসএইচআর/কেএ