‘আমাকে বাঁচতে দিলা না, যৌতুকের টাকা শোধ করে দিও’
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় বিয়ের আগের দিন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে রীমা আক্তার (২০) নামে এক তরুণী। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে উপজেলার হাইদগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রীমা ওই এলাকার হীরা তালুকদার বাড়ির বাচা মিয়ার মেয়ে।
আত্মহত্যার আগে রীমা আক্তার একটি চিরকুট লেখেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, প্রিয় শখের পুরুষ। তুমি করো তোমার বিয়ে। অনেক ভালোবেসেছ এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছ। আমি পারছি না এত যন্ত্রনা নিতে। বাকি জীবনটা সুন্দর করে উপভোগ করতে পারলাম না। ভালো থেকো আজকের দিনেও তোমার যন্ত্রণা নিতে পারছি না। আমার পরিবার থেকে যে যৌতুকের টাকা তোমাদের দিয়েছে সেগুলো শোধ করে দিও। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না।
‘আমি বাঁচতে পারতাম যদি আমি বেশি মানসম্মানওয়ালা পরিবারের জন্মগ্রহণ না করতাম। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমার পোস্টমর্টেম করিয়ে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে মুছে আমাকে কবরে পাঠিও। আর আমার পরিবারকে বলছি মোরশেদকে তোমরা ছাড়বা না। ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি তোমরা দেবা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকবছর ধরে মিজানুর রহমান নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। মিজান আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জে কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে ঠিক হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) তাদের মেহেদী অনুষ্ঠান এবং আগামীকাল (শুক্রবার) তাদের বিয়ে হওয়ার কথা।
রীমা আক্তারের চাচা নাছির উদ্দিন বলেন, দুদিন আগেও মিজানুর রহমানের পরিবারকে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এটি বরযাত্রীর খাবারের পরিবর্তে বলে নিয়েছে তাদের পরিবার। আমার ভাতিজি আত্মহত্যার আগে চিরকুটে উল্লেখ করেছেন তাকে আজকেও নাকি ভিডিও কল দিয়ে যৌতুকের টাকা দাবি করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
রীমার ভাই আজগর হোসেন জানিয়েছেন, তার বোনের কাছে যৌতুক হিসেবে ফুলসেট ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজ এবং বিয়ের খরচ হিসেবে নগদ টাকা দাবি করা হয়। উভয়ের প্রেমের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও যৌতুক দাবি করায় তার বোন অপমানিত হয়ে রাগে আত্মহত্যা করে।
তিনি বলেন, আমার বোন পটিয়া সরকারি কলেজে অনার্সের ছাত্রী ছিল। ছেলের পক্ষের আগ্রহে আমরা বিয়েতে রাজি হয়েছি। ছেলে যে এতটা যৌতুক লোভী হবে আমরা জানতাম না। প্রাণ দিয়ে আমার বোন তার মুখোশ উম্মোচন করে দিয়েছে। আমরা এতদিন বুঝতে পারেনি।
পটিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রহিম সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআর/এমএ