ওসিকে ধাক্কা দেওয়া সেই এএসআই চাকরিচ্যুত
চট্টগ্রাম নগরের এক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ধাক্কা দিয়ে আলোচনায় আসা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সন্তু শীলকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বিভাগীয় মামলার আদেশে গত ৩ এপ্রিল এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
রোববার (২৩ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) আবদুল ওয়ারীশ।
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, গত বছরের ২০ এপ্রিল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে এএসআই সন্তু জনসম্মুখে কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবিরককে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দেন এবং তার সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অপেশাদারসূলভ আচরণ করেন। মামলায় এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে এএসআই সন্তুকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়।
জানা গেছে, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে প্রায় চার বছর তার বডিগার্ড ছিলেন সন্তু শীল। গত বছরের ২০ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা এলাকায় নওফেল নিজ সংসদীয় আসনে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করতে গেলে ওসি জাহিদুল কবিরকে ধাক্কা দেয় এএসআই সন্তু।
এ ঘটনায় ওই সময় নিজ থানায় জিডি করেন কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির। পাশাপাশি তিনি সিএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর গত বছরের ২৫ এপ্রিল এক আদেশে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। একই দিন আলাদা আরেকটি আদেশে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দিনকে। তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। গত ২ মে পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে তাকে প্রশাসনিক কারণে সিএমপি থেকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়।
রেঞ্জ কার্যালয় থেকে তাকে বাগেরহাট জেলা পুলিশে যোগদান করতে বলা হয়। এরপর জেলা পুলিশের নির্দেশে তিনি ফকিরহাট মডেল থানায় যোগ দেন। এরই মধ্যে পুলিশের বিভাগীয় অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে ওঠা ওসিকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয় সিএমপি। গত বছরের ১১ জুন সিএমপি অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে বাগেরহাট জেলা পুলিশকে বিষয়টি জানায়। সিএমপির চিঠি পেয়ে ফকিরহাট থানা পুলিশ তাকে ছাড়পত্র দিয়ে জেলা পুলিশ লাইন্সে যোগ দিতে বলে।
কিন্তু নিজ হাতে সই দিয়ে ছাড়পত্র গ্রহণ করেও পরবর্তী সময়ে পুলিশ লাইন্সে যোগ দেননি এএসআই সন্তু। এরপর গত বছর ১৫ জুন তিনি লিখিতভাবে আবেদন করে জানান যে, থানা থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। হাসপাতালটির চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা অথবা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হতে বলেন। এরপর থেকে তিনি বাগেরহাট জেলা পুলিশ লাইন্সে আর যোগ দেননি। এছাড়া, চিকিৎসার বিষয়ে কোনো কিছু জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের অবহিত করেননি। যদিও ওই সময়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। একপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় শাস্তি হয়।
পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা উপমন্ত্রীর বডিগার্ড হিসেবে কোতোয়ালি থানার ওসিকে নানা বিষয়ে তদবির করতেন সন্তু। তবে, ধাক্কা দেওয়ার ঘটনার কয়েক মাস আগে কোতোয়ালি থানার ওসি তাকে কোনো বিষয়ে তদবির করতে বারণ করেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন এএসআই সন্তু। এ কারণে শিক্ষা উপমন্ত্রীর সঙ্গে থাকার সময় তিনি কৌশলে ওসি জাহিদুল কবিরকে ধাক্কা দেন।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সন্তু শীলের এমন অসদাচরণ ওইবারই প্রথম নয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি নেজাম উদ্দিন, পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার, বন্দর থানার সাবেক ওসি জাহিদুল কবিরের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে। ওসি নেজাম উদ্দিন তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে জিডি করেছিলেন।
এমআর/কেএ