জীবিকার তাগিদ ঘরে ফিরতে দেয়নি তাদের
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবগুলোর অন্যতম হচ্ছে দুই ঈদ। যার প্রতিটিতেই নাড়ীর টানে রাজধানী ছেড়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতে আপন ঘরে পাড়ি জমান লাখ লাখ মানুষ। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায়, কোরাবানি করা, সেমাই-পিঠা এবং পোলাও-মাংস খাওয়াসহ পরিবার কেন্দ্রিক নানা আয়োজন উৎসবের আমেজে যুক্ত করে নতুন মাত্রা।
এবারের ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করেও বাস, ট্রেন, লঞ্চ এমনকি অভ্যন্তরীণ বিমানের ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়েছেন লাখো মানুষ। যার ফলে চিরচেনা ব্যস্ত নগরী ঢাকা এখন ফাঁকা। তবে এর মাঝেও কিছু মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ঘরে ফেরেননি। তারা ঢাকার অলিগলি, সড়কে সিএনজি, রিকশা, ভ্যান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই আবার দায়িত্বের কারণে কর্মস্থলে রয়েছেন। জীবন জীবিকার তাগিদ তাদের ঘরে ফিরতে দেয়নি।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, আজিমপুর এলাকায় এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের।
আরও পড়ুন
ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের সামনে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় সিএনজি অটোরিকশা চালক আতিকুল ইসলামকে। ঈদে কেন বাড়ি যাননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি মাগুরা। স্ত্রী-সন্তানরা ফোন করে অনেকবার বলেছে বাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু শেষ সময়ে হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। এরপর আসা-যাওয়া অনেক খরচ। ঈদের আগে যে টাকা আয় করেছি সেগুলো বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। ভেবেছিলাম ঈদের সময় সিএনজির খুব চাহিদা থাকবে। কিছু টাকা আয় করতে পারব। কিন্তু এখন দেখছি যাত্রীর পরিমাণ খুবই কম। বাড়ির সবার জন্য খারাপ তো লাগছেই। কিন্তু কিছুই করার নেই। টাকা উপার্জনের জন্য এই কষ্টটুকু মাথা পেতে নিতেই হবে।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি বাসস্ট্যান্ডে বিষণ্ণ মনে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় আরেক সিএনজি অটোরিকশা চালক সাব্বির হাসান। তিনি বলেন, এর আগেও ঈদে ঢাকায় থেকেছি। কিন্তু এমন যাত্রী শূন্যতা কখনো দেখিনি। আমার জমা আছে ১৩০০ টাকা। সকাল থেকে এখনো জমার টাকাই উঠাতে পারিনি। বাড়তি কিছু টাকা ইনকাম করার জন্য ঈদে বাড়িতে যাইনি। এখন দেখছি নিজের খাওয়া খরচই উঠেছে না।
জীবিকার তাগিদে বাড়ি যাননি রিকশাচালক সোহরাব হোসেনও। তিনি বলেন, গ্রামের বাড়ি বরিশাল। পরিবারের সবাই দেশেই থাকে। ঈদের সময় যাওয়া-আসা করতে বাড়তি টাকা লাগে। ঈদের পরে গেলে খরচ কম। সেজন্য বাড়িতে যাইনি। তবে অন্য সময়ে রাস্তার পাশে বিভিন্ন হোটেলে কম দামে খাবার পেতাম। এখন সেগুলোর অধিকাংশই বন্ধ। সেজন্য খাবারের কষ্ট করতে হচ্ছে।
গরিব মানুষের ঈদের আনন্দ নেই বলে মন্তব্য করেন ঠিকানা পরিবহনের চালকের সহকারী রহিম উল্লাহ। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। একদিন কাজে না গেলে পেটে ভাত পড়ে না। আমাদের আবার ঈদের আনন্দ কীসের? ঈদের দিনও ডিউটি করছি। এখনো করছি। যাত্রীর পরিমাণ কম। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা হওয়ার কারণে বেশি ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে।
অবশ্য এর বাইরেও অনেকেই বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা কোম্পানির আওতাধীন দোকানের কর্মচারী হওয়ার কারণে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যেতে পারেননি।
ধানমন্ডির রসঘর মিষ্টির দোকানের বিক্রয় কর্মী জুবায়ের হাসান বলেন, এ দোকানে আমরা চারজন ২ শিফটে কাজ করি। এর মধ্যে প্রতি ঈদে দুজন ছুটি পাই। গত ঈদে যেহেতু আমি ছুটি কাটিয়েছি সেজন্য এবারের ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। ডিউটি করতে হচ্ছে।
এছাড়াও জীবন-জীবিকার তাগিদে এবং দায়িত্বের খাতিরে ঈদে ঘরে ফিরতে পারেননি সড়কে দায়িত্ব পালন কারা ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্য, হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক, এটিএম বুথের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরাও।
আরএইচটি/এসকেডি