জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
চুয়াডাঙ্গায় দুই সাংবাদিককে হেনস্তার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
সাংবাদিককে মারধর এবং হেনস্তা করার ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিতকরণ এবং বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ৩০ জুলাই কমিশনে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সুয়োমটো আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
বুধবার (৫ জুন) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান জানান, গত ৩ জুন ‘চুয়াডাঙ্গায় দুই সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে’ শীর্ষক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে কমিশন স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
সুয়োমটোতে উল্লেখ করা হয়, চুয়াডাঙ্গায় চিত্র সাংবাদিক ও ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধিকে মারধর এবং হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। রোববার (২ জুন) রাত ৯টার দিকে শহরের সাতগাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাতগাড়ি এলাকার একটি পারিবারিক বিবাদের মীমাংসা করতে যান চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নাসরিন আক্তারসহ সঙ্গীয় ফোর্স। এ সময় নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপারসন শিমুল হোসেন। পরে পুলিশ সদস্যরা অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যাপারে শিমুলের কাছে জানতে চান। শিমুল তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে হেনস্তা করে কনস্টেবল শাহীন। পরে তার কাছে টেলিভিশনের আইডি কার্ড দেখতে চান কনস্টেবল। একপর্যায়ে বিষয়টি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলীকে জানানো হলে আরও ক্ষুব্ধ হয় ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা। সেই সঙ্গে যোগ দেন সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন।
এসআই মামুন ও এএসআই নাসরিনের নির্দেশে চিত্র সাংবাদিক শিমুলকে পিকআপভ্যানে তোলা হয়। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছান ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সেলিম। এ সময় তিনি পিকআপভ্যানের ছবি তুলতে গেলে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এসআই মামুন। ভেঙে ফেলা হয় সাংবাদিকের ব্যবহৃত ফোনটি। পরে বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করলে ওই চিত্র সাংবাদিককে পিকআপভ্যান থেকে নামিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন পুলিশ সদস্যরা।
চিত্র সাংবাদিক শিমুলের অভিযোগ, শুরু থেকেই অশালীন ব্যবহারে মারমুখী আচরণ করেন পুলিশ সদস্যরা। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারা। পরে পিকআপভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন তারা। স্থানীয় লোকজনও এর প্রতিবাদ করেন।
ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, প্রথমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কথা থানার ওসিকে জানানো হলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পুলিশ সদস্যরা। তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাকেও হেনস্তা করা হয়। কেড়ে নেয় ব্যবহৃত মোবাইল ফোন।
সুয়োমটোতে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রের পেশাদার শৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশ পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে মারধর এবং হেনস্তা করা বিষয়ক অভিযোগটি অত্যন্ত অনভিপ্রেত। পুলিশ বাহিনীর কতিপয় সদস্যের এমন কর্মকাণ্ডে দেশে-বিদেশে পুরো বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন মর্মে কমিশন মনে করে।
এ অবস্থায়, চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিককে মারধর এবং হেনস্তা করার ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিতকরণ এবং বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ৩০ জুলাই কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করতে পুলিশ মহাপরিদর্শকে (আইজপি) বলা হয়েছে।
জেইউ/এসকেডি