বেনজীরের সুরক্ষাকারীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান টিআইবির
রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের ক্ষমতার লাগামহীন অপব্যবহার বেনজীরদের মতো ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করছে, যা রাষ্ট্রীয় জবাবদিহি কাঠামোকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে এসব ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের সহযোগী এবং সুরক্ষাকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি জোরপূর্বক জমি দখলে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সাবেক পুলিশ ও র্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদের অবৈধভাবে বিপুল অর্থ ও সম্পদ অর্জনে সরকারি ক্ষমতার এমন অপব্যবহারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সোমবার (৩ জুন) বিবৃতি দিয়েছে টিআইবি।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর শীর্ষ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের এমন দৃষ্টান্তকে ন্যাক্কারজনক আখ্যা দিয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাবেক পুলিশ প্রধান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ভয় দেখিয়ে, জোর প্রয়োগ করে জমি কিনে নেওয়া এবং তা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ও সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সদস্যদের যোগসাজশের যেসব অভিযোগ জানা যাচ্ছে তা সত্যিই ভয়ংকর। তার এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের কোথাও বিচারপ্রাপ্তির সুযোগও বলপূর্বক প্রতিরুদ্ধ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় মূল অপরাধী ও যোগসাজশকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি ভয়ে বা জিম্মি হয়ে জমি বিক্রয়ে বাধ্য হওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।’
আরও পড়ুন
সাবেক পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ যখন তদন্তাধীন রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত নামে-বেনামে নতুন নতুন সম্পদের হদিস পাওয়া যাচ্ছে, তখন সাবেক পুলিশ প্রধানের পরিবারসহ দেশত্যাগ কীভাবে সম্ভব- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ প্রধান দেশ ছেড়েছেন এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থও তুলে নিয়েছেন। এমন বাস্তবতায় তার মতো আলোচিত ব্যক্তির সবার অজান্তে দেশ ছেড়ে যাওয়া সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। তার এই বিদেশে চলে যাওয়ার ঘটনা কারও যোগসাজশের মাধ্যমে হয়েছে কি-না, ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন ও তা বিদেশে পাচারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ ছিল কি না কিংবা তার বিরুদ্ধে তদন্ত বাস্তবে শুধুই লোক দেখানো কি না এমন প্রশ্ন ওঠা মোটেও অমূলক নয়। সাবেক পুলিশ প্রধানকেই দুর্নীতির দায়ে আইনের আওতায় আনলেই হবে না, তাকে সুরক্ষা বা সহযোগিতা প্রদান করা সকল ব্যক্তিরই যথাযথ বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সাবেক পুলিশ প্রধান হিসেবে আইনের ভক্ষকের উৎকট দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, এত দিন ধরে দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, অথচ বিষয়টি সরকারের নজরে আসেনি- এমন দাবি মানার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে, এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, এমন অপরাধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের একাংশ শুধু তাকে সুরক্ষা দেয়নি, সহযোগিতাও করেছে, ক্ষেত্রবিশেষে উৎসাহও দিয়েছে, যা প্রশাসনযন্ত্রে রাজনৈতিক অঙ্গনের ভেতরে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরিতে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দাবি অনুযায়ী, যারা দুর্নীতি করেছে তাদের সবার তথ্য সরকারের কাছে আছে। বিরল হলেও বাস্তবতার এমন স্বীকৃতির যথার্থতার স্বার্থে সরকারকে জবাব দিতে হবে- তাহলে একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির এমন বিপুল নজির সৃষ্টি কীভাবে সম্ভব হলো? একইভাবে সেক্ষেত্রে সেই তালিকা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকারের যথার্থতার প্রমাণ দিতে হবে, অন্যথায় এমন অঙ্গীকার প্রহসনে পরিণত হবে।
আরএম/এমএ