বাবাকে চেয়ারম্যান বানাতে ইফা কর্মকর্তার ‘নির্বাচনী বৈঠক’
চট্টগ্রামের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সক্রিয় অবস্থান নিতে দেখা গেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) সহকারী পরিচালক মোহাম্মাদ ইকবাল বাহার চৌধুরীকে। তার বাবা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ওই নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাবাকে জেতাতে ইকবাল বাহার সরকারি চাকরির প্রভাব খাটিয়ে লোহাগাড়ার বিভিন্ন মসজিদে একাধিক বৈঠক করেছেন। এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলার মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকরা।
যদিও বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ইফা কর্মকর্তা ইকবাল বাহার। তবে বৈঠকের একাধিক ছবি ও ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এছাড়া সভায় উপস্থিত একাধিক শিক্ষক বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে। শুধু তাই নয় জরুরি বৈঠকের কথা বলে শিক্ষকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে যে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে সেটির স্ক্রিনশটও প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। সভায় বাবার পক্ষে কাজ করার জন্য শিক্ষকদের নির্দেশনা দেন ইকবাল বাহার।
ইকবাল বাহার বর্তমানে ইফার নিয়ন্ত্রণাধীন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ও কমপ্লেক্সের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে তিনি রাঙ্গামাটিতে জেলা কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে বাবা নির্বাচন করবেন এজন্য তিনি গত ১৪ মে তদবির করে হঠাৎ চট্টগ্রামে বদলী হয়ে আসেন।
ইফা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইকবাল বাহারের দায়িত্ব জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে। এর বাইরে চট্টগ্রামের আর কোথাও তার দায়িত্ব নেই। এক্ষেত্রে লোহাগাড়ায় শিক্ষকদের ডেকে মিটিং করার কোনো এখতিয়ার তার নেই। শুধুমাত্র উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাবার পক্ষে হয়ে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিতে তিনি বিভিন্ন মসজিদে সভা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন। এটি নির্বাচন কমিশনের ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী (২০ মার্চ, ২০২৪) উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ২২ নম্বর ধারার ১ নম্বর ও ২ নম্বর উপ-ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন
লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী খোরশেদ আলম চৌধুরীর অভিযোগ, ইকবাল বাহার চৌধুরী গত ২২ মে বৌদ্ধ পুর্ণিমা উপলক্ষ্যে সরকারি বন্ধের দিন ইফার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত লোহাগাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১৫৭টি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের নিয়ে গোপন বৈঠক করেন। ওইদিন সকাল ৯টায় ইফার লোহাগাড়ার সুপারভাইজার ও মডেল কেয়ারটেকারের যোগসাজশে উপজেলার চুনতি মুজাদ্দেদিয়া খানেকায়ে মসজিদে প্রথম বৈঠক করেন তিনি। যেখানে চুনতি, বড়হাতিয়া ও আধুনগর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। একই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় লোহাগাড়া সদরের দরবেশীয়া শাহী জামে মসজিদে লোহাগাড়া, আমিরাবাদ ও পদুয়া ইউনিয়ন এবং দুপুর ১২টায় উপজেলার পশ্চিম কলাউজান বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদে পুটিবিলা, চরম্বা ও কলাউজান ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে গোপন বৈঠক করেন ইকবাল বাহার।
এ বিষয়ে খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, সরকারি প্রভাব খাটিয়ে বাবাকে জেতানোর জন্য ইকবাল বাহার মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। এটি সরকারি চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যথাযথ শাস্তি ও তাৎক্ষণিক বদলির দাবি জানাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে আমি ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, আমি সরকারি চাকরিজীবী, নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ গ্রহণের প্রশ্ন আসে না। আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করি। আমি আগেও লোহাগাড়ার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। গত ২১ মে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ও কমপ্লেক্সে জয়েন করেছি। আমি কোনো প্রচারণায় নেই।
তবে ইকবাল বাহার চৌধুরী অস্বীকার করলে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লোহাগাড়া মডেল মসজিদের কেয়ারটেকার মো. রাশেদুল হক। এছাড়া বৈঠকের বিষয়ে ইফার লোহাগাড়ার সুপারভাইজার আবু বকর রফিক বলেন, ইকবাল বাহার চৌধুরী স্যারের সঙ্গে আমাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। এর বাইরে আমার কোনো বক্তব্য নেই।
সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণের বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আহসান বলেন, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করার এখতিয়ার নেই। গত এক সপ্তাহ আমি ঢাকায় ছিলাম। আমি এখনো অভিযোগটি পায়নি। যদি কেউ এমন কাজ করে থাকে তাহলে সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লোহাগাড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ ইনামুল হাছান বলেন, ইফা কর্মকর্তার নির্বাচনে প্রচারণার অংশ নেওয়ার বিষয়ে একটি অনুলিপি পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা ইসলামী ফাউন্ডেশনে চিঠি দিয়েছি।
এমআর/এসএম