বীর বাহাদুর-সুন্দরীর ফুটবলে মাতবে চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীরা
দুই বছর আগে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে মাহুতসহ আটক হয়েছিল ২ হাতি। পরে সেগুলো জাতীয় চিড়িয়াখানায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি হাতির নাম রাখা হয়েছে বীর বাহাদুর। রাস্তার চাঁদাবাজি ভুলে সে এখন পুরোদস্তুর ফুটবল খেলোয়াড়! আর এ খেলায় তাকে সঙ্গ দিচ্ছে সুন্দরী নামে আরেক হাতি।
চিড়িয়াখানায় আসা দর্শনার্থীদের পিঠে না চড়িয়ে নানা রকম শারীরিক কসরত আর ফুটবল খেলা দেখিয়ে মাতিয়ে রাখেন এরা। ঢাকা চিড়িয়াখানায় মোট ৫টি হাতি রয়েছে। করোনাকালে বিধিনিষেধের সময়ে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে দর্শনার্থীদের ভিন্ন স্বাদের বিনোদন দিতে ফুটবলে পারদর্শী করে তোলা হচ্ছে হাতিগুলোকে। এরই মধ্যে ফুটবল খেলা ৭০ শতাংশ রপ্ত করেছে তারা।
ভবিষ্যেতে তাদের দিয়ে বাস্কেটবলও খেলানো পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. আবদুল লতিফ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানার একটি ছোট মাঠে হাতি দুটির সঙ্গে খেলা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ২ মাহুম। সাধারণে ফুটবলের মতোই খেলা শুরুর আগে হাতি দুটো দৌড়া-দৌড়িসহ বিভিন্ন শারীরিক কসরতে নিজেদের তৈরি করছে। দেখা গেল, মাহুতের ইশারায় দৌড়ে গিয়ে দুই পা গাছের ওপর তুলে দিয়েছে বীর বাহাদুর। আবার ছোট একটি স্লাবে চার পায়ে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে শুঁড় তুলে বিভিন্ন কৌশলে খেলার প্রস্তুতি সারছে। তবে বয়সের ভারে বীর বাহাদুর চোখে একটু কম দেখলেও সুন্দরী সবদিক দিয়েই ফিট। চোখে কম দেখার কারণে বেশিরভাগ বলের শট সেভাবে দিতে না পারলেও সুন্দরীর প্রতিটি শট যেন মাঠের ফুটবলারদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
জাতীয় চিড়িয়াখানায় দুটি হাতিকে সপ্তাহে ৫দিন ফুটবল খেলার ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. আবদুল লতিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ চিড়িয়াখানায় ১৮৬ একর জায়গায় ১৩৫ প্রজাতির প্রায় তিন হাজার প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে হাতি আছে পাঁচটি। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় পর্যটকরা এসে হাতি দেখে চলে যায়। সেখান থেকে আমার মনে হলো যে গ্রামে-গঞ্জেও তো মানুষ হাতি দেখে, রাস্তা-ঘাটেও দেখে। কিন্তু চিড়িয়াখানায় এসেও যদি শুধু হাতি দেখে চলে যায় তাহলে আমাদের নতুনত্ব কি হলো? কারণ দেশের জাতীয় একমাত্র চিড়িয়াখানায় নতুনত্ব কিছু থাকতে হবে এটা একটা বিষয়। এর বাইরেও আমি গত বছর সরকারিভাবে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখেছি হাতি ফুটবল খেলে। হাতি বাস্কেট বল খেলে। এ দুই চিন্তা থেকেই আমি এখানে বীর বাহাদুর ও সুন্দরীকে দিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করেছি। আমার চিন্তা ছিল আমাদের হাতিগুলোকে কিভাবে ফুটবলে অভ্যস্ত করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘মাত্র দুই মাসের প্র্যাকটিসে প্রায় ৭০ ভাগ ফুটবল খেলাটা আত্মস্থ করেছে। আমার ইচ্ছা এটা নিয়ে আমি আর একটা স্টেপ এগোবো। হাতি দুটি ফুটবল খেলাটা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ রপ্ত করার পর ওদের দিয়ে বাস্কেট বলের প্র্যাকটিস করাবো। বাস্কেট বল খেলা যখন ৮০ থেকে ৯০ ভাগ আত্মস্থ করবে, তারপর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, সচিব ও ডিজির অনুমতিতে এখানে একটা বড় এনক্লোজার করবো। এনক্লোজারের মাধ্যমে সরকারের অনুমতি নিয়ে সেখানে টিকিট সিস্টেমে হাতির ফুটবল, বাস্কেট বল খেলা পরিদর্শন করাবো। এর মাধমে সরকার রাজস্ব পাবে এবং হাতির শারীরিক কসরত হবে। মানুষ চিড়িয়াখানার প্রাণীদের দেখে কেন বিনোদন পাবে, তাদের শারীরিক কসরতের মাধ্যমে বিভিন্ন খেলা দেখতে পারলে পর্যটকরা বেশি বিনোদন পাবে। এতে হাতিরা নিজেরাও আনন্দিত হবে এবং দর্শকরাও বিষয়টি উপভোগ করবে। এই সব চিন্তা থেকেই আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৭টি ঘোড়া আছে। আমার চিন্তা আছে এনক্লোজারের মাধ্যমে ঘোড় দৌড়ের আয়োজন করবো। এছাড়া ঘোড়ার পিঠে চড়ে এবং ঘোড়া দৌড় খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারলে সরকার রাজস্ব আহরণ করতে পারবে। এতে দর্শনার্থীদের বিনোদনের পাশাপাশি, প্রাণীগুলোর শারিরীক ব্যায়াম হবে। যেকোন প্রাণীর হজম করতে হলে শারীরিক কসরত করা জরুরি। চিড়িয়াখানা সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রোববার হাতির পোশাক পরিয়ে তাদের বাইরে বের করে লোকালয়ে নিয়ে যাই। এতে করে তারা অনেক মানুষজন দেখে অভ্যস্ত হচ্ছে।’
এসআর/এসএম