ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেশকে বিপথে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল
ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে বিপথে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যাও বিকৃত করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।
শনিবার (২৫ মে) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা-২০২৪ উপলক্ষ্যে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গুরু ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যার পর প্রথম যে ঘোষণা দেয়, তখন বাংলাদেশকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। ঘোষণাও দিয়েছিল খুনিরা, কিন্তু সেটা টেকেনি। বাংলাদেশের মানুষ সেটা নেয়নি। কারণ বাংলাদেশকে জাতির পিতা অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্ম বর্ণের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, দেখেছি কীভাবে একটি ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে বিপথে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরাই স্লোগান দিয়েছি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বাংলাদেশ এটা মানে।
বিএনপি সরকার নববর্ষ ও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন শতাব্দীতে আমরা যখন পদার্পণ করব বলে একটি প্রোগ্রাম নিয়ে জাতীয় কমিটি করেছিলাম, খালেদা জিয়া তখন ক্ষমতায়, আমাদের অনুষ্ঠান করতে দেবে না। বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা নাকি হিন্দুয়ানি। অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শুনতে হতো। সেই অনুষ্ঠানে বাধা দিল। কিন্তু দেশের মানুষ সেই বাধা মানল না। দেশের মানুষ যেটা ন্যায়সংগত হয়, সেটিই করে। একপ্রকার জোর করেই আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকলাম, তখন হাজার হাজার মানুষ। আমরা দিবসটি উদযাপন করলাম। এখন কিন্তু পহেলা বৈশাখ, নববর্ষ আমরা উদযাপন করি। এই উৎসবটা কিন্তু ধর্ম বর্ণ সবাই মিলে পালন করি। আর প্রত্যেক ধর্মের উৎসবে সব ধর্মের মানুষ কিন্তু এই দেশে অংশ নেয়। পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রে কিন্তু এটি আছে বলে জানা নেই।
জাতির পিতা কিন্তু সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে যার যার ধর্ম সে পালন করবে। এটাই ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যাও বিকৃত করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। কেউ কেউ এটার অপব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এটা আমরা স্পষ্ট করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশটাকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। এখানে ধর্ম বর্ণ বলে কিছু নেই। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে চাই।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলে বিশ্বে আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি বলেও মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, অনেকেই চেষ্টা করে দেশকে ভিন্ন পথে নিতে। কিন্তু সেটি পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ খুব উদার এবং সবাই একসঙ্গে চলতে পছন্দ করি। প্রত্যেক ধর্মেরই মূল কথা মানবকল্যাণ। আমাদেরও সেই একই কথা।
ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগ সরকার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্যে আমরা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। সবাই তার মৌলিক অধিকার পাবে।
এমএসআই/জেডএস