ভারতের নির্বাচনের পর ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে ব্যবস্থা
ভারতের ভিসা প্রাপ্তি সহজ করা এবং ভোগান্তি ও চাপ কমাতে দুই বছর মেয়াদি ভিসা চালুর বিষয়ে দেশটির নির্বাচনের পরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এসে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বিষয়টি জানান।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, আজ ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের ভিসা পেতে মানুষের যে ভোগান্তি হচ্ছে সেজন্য ভিসা ব্যবস্থা আরও সহজ করার জন্য অনুরোধ করেছি। যাতে মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে ভিসা পেতে পারে।
ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা নিয়ে ভারত কী বলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, আমরা যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছি সে বিষয়ে তিনি এক মত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে সমস্যা রয়েছে সেগুলো সহজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মাঝেমধ্যে ভিসার আবেদন এতো বেশি হয়ে যায়, তখন সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন
বস্ত্রমন্ত্রী বলেন, আমি গত বছর রাজনৈতিক সফরে ভারতে গিয়েছিলাম সে সময় ভারতের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাকালে এ বিষয়টি বলেছি।
ভিসার চাপ কমাতে ভারত অন-এরাইভাল ভিসার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের বলেছি সৌদি আরবও ভিসা অনেক সহজ করেছে। কাজেই আপনাদের আগের জায়গায় থাকলে চলবে না। আপনারা বলছেন ওভারলোড হচ্ছে। সেটা কমাতে আমাদের যে ভিসা দিচ্ছেন সেটা দুই বছর মেয়াদি দিলে লোড কম হতো। লোড কমাতে ভিসার মেয়াদ দীর্ঘ মেয়াদি করতে হবে। এ বিষয়ে হাইকমিশনার এক মত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা চেষ্টা করছি। নির্বাচনের পরে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাটের অ্যান্টি ডাম্পিং নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পাটমন্ত্রী বলেন, ভারতে এখন নির্বাচন চলছে। নির্বাচনের পরে দুই সরকারের মধ্যে আলোচনা হবে। আমরা আশা করছি, কোনো ফলপ্রসূ ফলাফল আসবে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের পাটকলগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করার জন্য বলেছি। ইতোমধ্যে ভারতের তিনটি কোম্পানি আমাদের তিনটি জুটমিলে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং কারো কারো সঙ্গে আমাদের চুক্তিও হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ পাট বীজ ভারত থেকে আমদানি করি। এজন্য আমরা বলেছি আমাদের মানসম্পন্ন পাট বীজ দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পাটবীজ দিতে হবে। কোনোক্রমেই যেন বিলম্বিত না হয়। সে বিষয়ে নজর রাখার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছি। এবিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছি৷ এছাড়া আমাদের থেকে ভারত সিল্কে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। সিল্ক উৎপাদনে ভারত পৃথিবীর শীর্ষে রয়েছে। এজন্য দেশে মানসম্মত সিল্ক উৎপাদনে আমাদের কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছি। টেক্সটাইল খাতে দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করছি এটিকে আরও জোরদার করতে একমত হয়েছেন রাষ্ট্রদূত।
পাটের বীজ উৎপাদন বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, পাট অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারা দেশে একটি প্রজেক্ট চালু রয়েছে, পাট বীজ উৎপাদনে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য। যাতে কৃষক পাটবীজ আরও বেশি করে উৎপাদন করে। এর মাধ্যমে আমরা পাটবীজের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারব।
রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, ভারতে নির্বাচন চলছে, আমরাও নির্বাচন করেছি। কাজেই রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড লু সফর নিয়ে অনেকেই আনন্দে ছিলেন। ডোনাল্ড লু এসেছিলেন যেন তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়ার জন্য। ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য বাংলাদেশ সরকার, জনগণের সরকার ও শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সার্বিকভাবে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং দৃঢ় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্যই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সবসময় ভালো ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
এমএম/এসকেডি