আয়নাবাজি করে ১৭ বছর ধরে কারারক্ষী!
প্রকৃত নাম ইকরাম হোসেন হলেও আয়নাবাজির কৌশলে সাখাওয়াত হোসেন নামে এক ব্যক্তির নিয়োগপত্রে নিজের ছবি ব্যবহার করে কারারক্ষী হিসেবে প্রায় ১৭ বছর চাকরি করেছেন।
সিলেটে কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন সিনিয়র জেল সুপার বজলুর রশীদসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সরকারি দায়িত্ব পালন করে বেতন-ভাতা ও রেশন সামগ্রী বাবদ মোট ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৫১৭ টাকা উত্তোলন করেছেন।
সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ, জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার কারণে ওই কারারক্ষী ও সাময়িক বরখাস্ত হওয়া উপ মহাপরিদর্শক মো. বজলুর রশীদসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যদি ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি দায়ের করা মামলায় আসামি ছিল দুইজন। কিন্তু অনুমোদিত চার্জশিটে ইকরাম ও বজলুর রশীদসহ আরও দুইজনকে আসামি করা হয়েছে।
বাকি দুইজন আসামি হলেন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক আব্দুল কুদ্দুস। তদন্ত কর্মকর্তা ও উপসহকারী পরিচালক নিঝুম রায় প্রান্ত শিগগিরই চার্জশিট আদালতে দাখিল করবেন বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামি ইকরাম হোসেন যিনি ভুয়া সাখাওয়াত হোসেন নামে কারারক্ষী নং- ২২০৮৮ (সাময়িক বরখাস্ত হওয়া) অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যের রূপ ধারণ করে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ পান।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্য থেকে কারারক্ষী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই কারারক্ষী নিয়োগের জন্য সিলেটে কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার বজলুর রশীদকে সভাপতি এবং অন্য চার সদস্যের নিয়োগ টিম গঠন করা হয়। ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সাখাওয়াত হেসেনসহ ২৫ জনকে প্রাথমিকভাবে কারারক্ষী পদে নির্বাচিত করেন কারা উপমহাপরিদর্শক। নিয়োগপ্রাপ্ত সাখাওয়াত হোসেনকে ১৫ জানুয়ারি ২০০৪ তারিখ বা তার পূর্বে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং নির্ধারিত তারিখ ও সময়ের মধ্যে যোগদান করতে ব্যর্থ হলে কোনো প্রকার কারণ ব্যতিরেকেই এই নিয়োগাদেশ বাতিল হয়ে যায়।
পরবর্তী সময়ে নিয়োগকৃত কর্মচারীর নিয়োগপত্র/অন্যান্য কাগজপত্র যাচাইপূর্বক সঠিকতার ভিত্তিতে তাকে যোগদান করতে বলা হয়। কারারক্ষী পদে এই নিয়োগাদেশ যথাসময়ে প্রকৃত প্রাপক সাখাওয়াত হেসেনে কাছে পাঠানো হয়নি। অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মো. সাখাওয়াত হোসেন ওরফে ইকরাম কৌশলে প্রকৃত সাখাওয়াত হোসেনের ঠিকানা ব্যবহার করে এবং নিয়োগপত্রে নিজের ছবি ব্যবহার করে কারারক্ষী পদে যোগ দেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইকরাম হোসেন ভুয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে সার্ভিস বই তৈরি করে বেতন-ভাতা ও রেশন সামগ্রী বাবদ মোট ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৫১৭ টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধির ৪১৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় একই ধারায় অন্যান্য আসামিদের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরএম/এসএম