তামাক পণ্য ব্যবহারে বছরে মৃত্যু দেড় লক্ষাধিক
তামাক পণ্য ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এই পরিস্থিতিতে দেশে এখনও প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করেন।
চিকিৎসা পেশাজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর এনসিডি কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (বিএনএনসিপি) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।বুধবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে সংগঠনটির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এই অবস্থায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তামাক আসক্তি থেকে দূরে রাখতে সব ধরনের তামাকপণ্যের দাম তরুণদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের ফলে তামাক ব্যবহার ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ১৮.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তামাকের কর বাড়িয়ে এর দাম বৃদ্ধি ও সহজলভ্যতা হ্রাস করতে পারলে প্রায় ১১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে এবং ৮ লক্ষাধিক তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। যার মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে ৩ লাখ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী এবং ৪ লাখ তরুণের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে জানা যায়, বিশ্বের ৭০ লাখ মানুষ সরাসরি তামাক সেবনের কারণে মারা যায়। এর মধ্যে ১০ লাখ ২০ হাজার মানুষ যারা ধূমপান করেন না, তারা পরোক্ষ ধূমপানের জন্য মারা যান। বিশ্বের শতকরা ৮০ ভাগ অর্থাৎ ১০০ কোটি ২০ লাখ ধূমপায়ী নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোয় বাস করে।
পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি শিশু প্রতিদিন জনসম্মুখে ধূমপান থেকে দূষিত বাতাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করছে। পরোক্ষ ধূমপানের জন্য বিশ্বে প্রতি বছর ১০ লাখ ২০ হাজার প্রিম্যাচিউর শিশু মারা যায় এবং ৬৫ হাজার শিশু বিভিন্ন ধরনের অসুখে ভুগে মারা যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, একজন মানুষের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব কয়টি অঙ্গের ক্ষতি করে তামাক ও তামাকজাত পণ্য। নারীরা যদি ধূমপায়ী হন তাহলে তার গর্ভের সন্তান মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারেন।
এদিকে তামাক কোম্পানিগুলো থেকে সরকার বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পায়। অথচ বছরে তামাকের স্বাস্থ্য ক্ষতিই হয় ৩০ হাজার কোটি টাকার উপরে। চলতি বছরের স্বাস্থ্য খাতের বাজেটই ২৯ হাজার কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, তামাকের কারণে ক্ষতির পরিমাণ স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের চেয়েও বেশি।
বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, সিগারেটে ৭ হাজার ৫৩৫টি রাসায়নিক দ্রব্য আছে। এর মধ্যে ২৫০টি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং ৭০টি দ্রব্য ক্যানসার হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে ব্যক্তি ধূমপান করেন, তার পাশে যে থাকেন, তিনিও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এভাবে যারা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন, তাদের ২৫টি রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলোর মধ্যে হলো হৃদরোগ, ব্রেন স্ট্রোক, মুখের ক্যানসার, গলার ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, পাকস্থলীর ক্যানসার, অকালে গর্ভপাত, যৌনশক্তি হ্রাস, গ্যাংগ্রিন, চুল পড়া, চোখের ছানি ইত্যাদি।
টিআই/এসকেডি