ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে তরমুজে ভেলকিবাজি
অতীতে তরমুজ পিস হিসেবে বিক্রি হলেও বর্তমানে রাজধানীতে বিভিন্ন ফলের দোকানে বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। প্রতি কেজির দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ফলে, গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফলটির দাম তিক্ততার পর্যায়ে পৌঁছেছে ক্রেতাদের কাছে। আড়তদাররাও খুচরা বাজারে তরমুজের দাম অতিরিক্ত বলে মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন ফলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বড় সাইজের ১০০ তরমুজের দাম ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ একটি বড় সাইজের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
জানা গেছে, ক্ষেত থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তর পাড়ি দিয়ে খুচরা বিক্রেতার দোকানে ফলটি আসে পিস হিসেবে। দামও পিস হিসেবেই নির্ধারিত হয়। তবে খুচরা দোকান থেকে ক্রেতারা সেটি আর পিস হিসেবে কিনতে পারছেন না। কিনতে হচ্ছে কেজি দরে তথা উচ্চ দামে। এতে নিম্নবিত্তসহ অনেকেই তরমুজের দাম শুনে চোখ ওঠাচ্ছেন কপালে। তরমুজ কিনতে এসেও অনেকেই বাসায় ফিরছেন খালি হাতে। তারা বলছেন, এত দাম দিয়ে তরমুজ কেনার সাধ্য নেই। আর সারাজীবনই ফলটি পিস হিসেবেই বিক্রি হয়েছে। ক্রেতারাও এটি সে হিসেবেই কিনেছেন। এখন এটি কিনতে হয় পাল্লার মাপে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, পুরান ঢাকার সেকশন ও ওয়াইজঘাটসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সারাদেশ থেকে আসা তরমুজ পাইকারি দরে বিক্রি হয়। এসব জায়গা থেকেই পুরো রাজধানীতে সাপ্লাই হয় ফলটি। এসব পাইকারি বাজারে সাইজভেদে ১০০ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে চার হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়।
তবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে দাম বেশি। কেজি হিসেবে না বিক্রি করলে পোষায় না। আবার আড়তদাররা বলছেন, খুচরা বিক্রেতারা আসলেই বেশি দামে বিক্রি করেন। ৫০ টাকার নিচে কেজি বিক্রি করলেও ভালো লাভ থাকার কথা।
ধানমন্ডি শংকর এলাকার একটি দোকানের ফল বিক্রেতা জলিল বলেন, ‘আজ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। আমাদের ১০০ তরমুজ কিনতে হয় ৪৫ হাজার টাকায়। সিজন শেষের দিকে হওয়াতে দাম একটু বেশি।’
ফলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, তরমুজ কিনতে এসে দাম শুনে না কিনেই ফিরে যান মারুফ খলিফা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সারাজীবন তরমুজ কিনলাম পিস হিসেবে। আর এখন দেখছি কেজি হিসেবে কিনতে হয়। তার ওপর দাম চড়া। ৬০ টাকা কেজি। একটা বড় সাইজের তরমুজ কিনতে যদি ৪৫০/৫০০ টাকা লাগে, তবে মানুষ খাবে কী করে?’
পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, আজ সাইজভেদে তরমুজের শত বিক্রি হচ্ছে চার থেকে ৩০ হাজার টাকা। ২-৩ কেজি সাইজের ১০০ তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৪-৫ হাজার টাকায়; ৩ থেকে সাড়ে ৪ কেজি সাইজের দাম সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা আর সাড়ে ৮ কেজি সাইজ পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকায়।
সেখানকার আড়তদার রাজু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ওয়াইজঘাটে মোট ৫০টি ফার্ম আছে। এসব ফার্মে তরমুজ থাকলে দাম কিছুটা কম থাকে। যদি ২০টি ফার্মে তরমুজ থাকে তখন দাম চড়া থাকে। তবে আজকের বাজার স্বাভাবিক ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘খুচরা বিক্রেতারা যে দামে তরমুজ কেনেন এতে ৫০ টাকার নিচে কেজি বিক্রি করলেও ভালো লাভ থাকার কথা। কিন্তু তারা অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। যেটা খুবই অতিরিক্ত।’
কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করায় বরিশালে জরিমানা
কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করার দায়ে বরিশাল নগরীর বিভিন্নস্থানে ১৪ ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে অভিযান চালিয়ে তাদের জরিমানা করা হয়।
নগরীর ফলপট্টি, জেল খানার মোড়, পোর্ট রোড, নতুন বাজার, চৌমাথা বাজার, নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড, বাংলা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হাই আট ব্যবসায়ীকে ছয় হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করেন। অপর একটি অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়া ত্রিপুরা ৬ জন ব্যবসায়ীকে তিন হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেন।
তরমুজ কেজি দরে বিক্রি বন্ধে মঙ্গলবারও বরিশালে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। দুই অভিযানে আরও আটজনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এমএইচএন/এফআর