এখনো ‘শাহবাগ শিশু পার্কে’ এসে ফিরে যান শিশু-অভিভাবকরা
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ কাজের জন্য গত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় শিশু পার্ক। কিন্তু এই বন্ধের খবর এখনো অনেকেই জানেন না। আর যারা জানতেন, তারা ভেবেছেন হয়ত এত দিনে পার্কটি খুলে গেছে। ফলে অনেকেই শিশুদের ঘুরতে নিয়ে এসে নিরাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকেলে শাহবাগের জাতীয় শিশু পার্কের সামনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
শিশু পার্কের গেটের সামনে দুই মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক অভিভাবক। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে তারা আবার চলে যান। ফেরার পথে কথা প্রসঙ্গে জানা যায় তিনি ফুলবাড়িয়া থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন শিশু পার্কে ঘুরতে। মামুনুর রহমান রশিদ নামের ওই অভিভাবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশু পার্ক যে এখনো বন্ধ সেটা আমি জানতাম না। শুনেছি অনেক আগে শিশু পার্ক সংস্কারের জন্য বন্ধ হয়েছিল। যেহেতু শিশুদের আনন্দ-বিনোদনের একটি জায়গা, তাই সরকার হয়ত দ্রুত সেটি আবার খুলে দিয়েছে মনে করেছিলাম। কিন্তু আজ এসে ফেরত যেতে হচ্ছে। আমার যতটা না মন খারাপ হয়েছে, তার চেয়ে আমার ছোট দুই মেয়ের মন খারাপ বেশি হয়েছে।
এই অভিভাবক যখন দুই মেয়েকে নিয়ে ফিরছিলেন তখন আরেক অভিভাবক তার ছোট মেয়েকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন গেটের দিকে। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে তারাও ফেরত আসেন। শেখ জাহাঙ্গীর আলম নামের ওই অভিভাবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমিও জানতাম না এখনো পার্কটি বন্ধ আছে। এই পার্ক কবে খুলবে সেটা কেউ বলতে পারছে না। পার্কটি সত্যিকার অর্থে শিশুদের বিনোদনের অন্যতম একটি জায়গা ছিল।
আরও পড়ুন
আগে শিশুদের বিনোদনের প্রধান কেন্দ্র ছিল এই শিশু পার্ক। ঈদসহ যেকোনো উৎসবে এখানে শিশুদের চাপ থাকত সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ। বিকেলে পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, একের পর এক অভিভাবক শিশুদের নিয়ে আসছেন এবং ফিরে যাচ্ছেন।
মুগদা থেকে আসা শেখ জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকেলে ছেলেকে নিয়ে শিশু পার্কে ঘুরতে নিয়ে এসেছিলাম। শহুরে এই জীবনে ওদের আর বিনোদনের জায়গাই নেই। কিন্তু এসে দেখি পার্কের অস্তিত্ব বলতে কিছুই নেই। শুধু পুরোনো সেই পূবালী ব্যাংকটা আছে। কর্তৃপক্ষের অন্তত প্রত্যেক উৎসবের আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির দিয়ে জানানো উচিত। এখানে এসে শুনলাম পাঁচ বছর ধরে পার্ক বন্ধ।
জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এর উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ডিএসসিসি। ২০১৯ সালে পার্কটি বন্ধ করে কাজ শুরু হয়। কাজ শুরুর পর থেকে শিশু পার্কটি জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা থেকে ৭৮ কোটি টাকা পার্কটির উন্নয়নকাজের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, শিশু পার্কটি রাজধানীর শাহবাগে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং সরকারিভাবে দেশের প্রথম এই পার্কটি ১৮৮৩ সালে শিশুদের প্রধান বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
এমএইচএন/এসএসএইচ