খালি দেখিয়ে বিনা ভাড়ায় কোয়ার্টারে থাকেন হাসপাতালের কর্তারা
কোয়ার্টার খালি দেখিয়ে কিংবা বরাদ্দ না নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করছেন ঠাকুরগাঁও সদর এবং ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কেউবা ডরমেটরি বরাদ্দ দেখিয়ে পরিবারসহ বছরের পর বছর বসবাস করছেন। অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূতভাবে বসবাসরত ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ঘটনার অনেকটাই সত্যতা মিলেছে।
রোববার (৩১ মার্চ) দুদকের ঠাকুরগাঁও অফিস থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযোগ ছিল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ঠাকুরগাঁও সদর এবং সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারী সরকারি কোয়ার্টার অননুমোদিতভাবে বসবাস ও ভাড়া দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করছেন।
অভিযানের বিষয় নিশ্চিত করে এ বিষয়ে দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদকের অভিযানকালে ঠাকুরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ক্যাম্পাস সংলগ্ন সরকারি কোয়ার্টারসমূহে বিনা বরাদ্দে বসবাস করা, আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাস করে ডরমেটরির ভাড়া প্রদান, নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীর নামের বিপরীতে বাসা বরাদ্দ গ্রহণ করে উচ্চ গ্রেডের কর্মচারীদের বসবাস করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম।
তিনি আরও বলেন, দুদকক টিম অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূতভাবে বসবাসরত ব্যক্তিদের নাম, পদবি ও ঠিকানা সংগ্রহ করেছে। এমন অনিয়মের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যাবলি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের নিকট উপস্থাপন করলে তিনি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। টিম এ বিষয়ে কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
আরও পড়ুন
অন্যদিকে অভিযানকালে দুদক ও ঘটনাস্থলে উপস্থিতি থাকা ঢাকা পোস্টের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের সরকারি কোয়ার্টারে বরাদ্দ না নিয়ে পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন কর্মকর্তাসহ দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের অনেকেই। এছাড়া নামমাত্র ভাড়ায় ডরমেটরি (যৌথ শয়ন কক্ষ) বরাদ্দ নিয়ে পরিবারসহ ফ্যামিলি কোয়ার্টারে থাকেন হাসপাতালের বেশ কয়েকজন নার্স ও ডাক্তার। অধিকাংশই রয়েছেন বিশেষ সুবিধায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। ফলে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। কোয়ার্টারের সাতটি ভবন ও কর্মচারীদের জন্য ডরমেটরি রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন পদের ৪৭ জন পরিবারসহ বসবাস করছেন। কিন্তু নিয়মানুযায়ী সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া গেছে কয়েকজনের।
সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মচারীদের মূল বেতনের ৪০ শতাংশ বাসা ভাড়া পেয়ে থাকেন। কোয়ার্টারে বসবাস করলে ওই টাকা নিয়ম অনুযায়ী কেটে নিয়ে সরকারি খাতে জমা হয়ে থাকে। আর ডরমিটরি বাসার (যৌথ শয়ন কক্ষ) ক্ষেত্রে মূল বেতনের ১০ শতাংশ টাকা হারে ভাড়া দিতে হয়। সরকারি বাসা বরাদ্দ নিলে বেতন স্কেল অনুযায়ী বাসা ভাড়া হিসেবে টাকা কাটা হয়।
অভিযান শেষে ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সিরাজুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এই বিষয়টি জানতাম না। আমার এখানে আসার বেশিদিন হয়নি। আজকে জানলাম, এ বিষয়ে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেব।
আরএম/আরিফ হাসান