বাসের অবৈধ পার্কিং, কথা রাখেননি রাঙ্গা
রাজধানীর বাসিন্দাদের চিরদিনের ভোগান্তির নাম যানজট। ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবৈধ পার্কিং। মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে দীর্ঘদিন ধরে যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। কিছুদিন পর ঈদযাত্রা শুরু হলে তখন ওই সড়ক ব্যবহারকারীদের দ্বিগুণ ভোগান্তি পোহাতে হবে।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছিলেন, ‘আমি এখান থেকে বের হয়ে আগে মহাখালী যাব। দেখি ওখানে কী সমস্যা। যারাই অবৈধ পার্কিং করছেন, অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
১১ দিন হয়ে গেলেও নিজের দেওয়া সেই কথা রাখতে পারেননি রাঙ্গা। অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেননি তিনি। এমনকি মালিক ও শ্রমিক পক্ষের কেউ এ বিষয়ে কোনো তোয়াক্কা করছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহাখালী রেল গেট পার হয়ে তেজগাঁওয়ের দিকের সড়কের অনেকটা জুড়ে অবৈধভাবে বাস পার্কিং করে রাখা আছে। আরেকটু এগোলে মহাখালী বাস টার্মিনাল, সেখানে টার্মিনালের সামনের সড়কের দুপাশেই একটি করে লেন দখল করে বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন
ঢাকা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে চলাচলকারী বাস লাবিবা, ঢাকা-বগুড়া-নওগাঁও রুটের শাহ ফতেহ আলী, ঢাকা-ফুলবাড়িয়া-ময়মনসিংহ রুটের আলম এশিয়া, ঢাকা হালুয়াঘাট রুটের ইমাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের নিরালা, পরাগ, ঢাকা-শেরপুর রুটের সরকার পরিবহন, একতা বাস, এনা পরিবহন, রাজিব পরিবহনসহ শতাধিক বাস সারিবদ্ধ অবস্থায় সড়কে অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। দিনভর সেখানে যানজট ঠেকাতে নাভিশ্বাস উঠছে ট্রাফিক পুলিশের।
জানতে চাইলে ট্রাফিক গুলশান বিভাগের (মহাখালী জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে সিটি করপোরেশন, ট্রাফিক পুলিশ, মহাখালী বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন পক্ষের একটি যৌথ সভা হয়েছে। সড়কে বিশেষ মুহূর্তে এক লেন পর্যন্ত পার্কিং করতে পারবে বলে সম্মতি দিয়েছে সিটি করপোরেশন। তবে দুই লেন বা তিন লেন পর্যন্ত পার্কিং করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
‘ঈদযাত্রায় গাড়ীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। তখন যেসব বাস টার্মিনালের ভেতরে জায়গা হবে না সেগুলো তো সড়কে চলে আসবেই, কী করা যায় চিন্তা করছি আমরা’- যোগ করেন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা।
অবৈধ পার্কিংয়ের সমাধান না হলে ঈদযাত্রায় একটা বড় সময় ঢাকাতেই ব্যয় হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ানোর কোনো অধিকার আমাদের নেই। যারা সড়কে অবৈধভাবে পার্কিং করবে, যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটাবে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ পদক্ষেপ নিক, আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’
আপনি নিজে এবং মালিক সমিতি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কেন অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না? জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব অসুস্থ। তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। এটা একটা সমস্যা তৈরি করেছে। এছাড়া ঢাকার সড়কের সক্ষমতার তুলনায় মহাখালী বাস টার্মিনালে বাসের সংখ্যা বেশি। ম্যানেজ করা কঠিন। তারপরও আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। যে টার্মিনালের সামনে যানজট হবে সেই টার্মিনালকে এর দায়িত্ব নিতে হবে। যদি গাড়ি কমানোর দরকার হয় সেটাই যেন করা হয়। তবু যেন যানজট তৈরি না হয়। এ নিয়ে আমি আজই (শনিবার) একটা নোটিশ দিয়ে দেব।’
এদিকে, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে মালিক-শ্রমিকদের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান। তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের ফিটনেসবিহীন, অনিরাপদ ও লক্করঝক্কর যানবাহন বা বাস সড়কে যেন না চলে। এ নিয়ে আমরা কঠোর থাকব৷ ফিটনেস না থাকলেই আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
জেইউ/এমএসএ