ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ চায় জাতীয় কারিগরি কমিটি
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে আশঙ্কাজনক হারে করোনার নতুন ধরন ছড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে ‘ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট’ ভাইরাসের কথা শোনা যাচ্ছে। যার প্রভাবে একদিনেই দেশটিতে তিন লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় ভারতের নতুন এই ধরন যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সে লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ বা কঠোর সতর্কতা জারির পরামর্শ দিয়েছে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি।
তারা বলছেন, যেহেতু ভারত একেবারেই কাছের দেশ, সীমান্তগুলোও সীমিতভাবে চালু রয়েছে, স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াতও রয়েছে, তাই দেশে এই ধরন চলে আসা সময়ের ব্যাপার। আর দেশে যদি এই ধরন এসে যায়, তবে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবে না। তাই এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভারত আমাদের সীমান্তবর্তী দেশ। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের কী অবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাদের সঙ্গে যেহেতু আমাদের এখনও সীমান্ত খোলা, যেকোনো সময়েই দেশটির ধরনটি আমাদের দেশে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি ভারত থেকে চলেই আসে, তবে তা আমাদের জন্য অনেক ঝুঁকির কারণ হবে।
তিনি বলেন, আগেই ভারত থেকে আসা যাত্রীদের সর্বোচ্চ কোয়ারেন্টাইনের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি সুপারিশ করেছিল। কিন্তু আমরা সেটাও করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সরকারকে কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আজকালের মধ্যে সরকারকে সুপারিশ করা হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কানাডার সিনিয়র পলিসি বিশ্লেষক ডা. শাহরিয়ার রোজেন বলেন, করোনাভাইরাস একটি m-RNA ভাইরাস এবং এটি স্বাভাবিক যে এখানে মিউটেশন হবে। অধিকাংশ মিউটেশনই উদ্বেগের কারণ না হলেও যখন স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন হয় এবং ভাইরাসের বিপদজনক চরিত্রগত পরিবর্তন হয় তখন সেটি বিশাল উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। করোনাভাইরাসের এমন বিপজ্জনক ধরনের উদ্ভব ঘটেছে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়া, নিউইয়র্ক এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে।
তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, বিপদজনক ধরনগুলো যেকোনো দেশ থেকে আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে। এজন্য বর্ডার কন্ট্রোল করা এবং ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত ভারতের ধরনটি অত্যন্ত বিপদজনক। এ কারণে ভারতের সঙ্গে আমাদের সব বর্ডার এখনই বন্ধ করা উচিত।
শাহরিয়ার রোজেন বলেন, নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়ানো এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এই সহজ কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো শত বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হয়েছিল এবং করোনার ব বিপদজনক ধরনকে এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এদিকে ভারতের ‘ডাবল ভ্যারিয়েন্ট’ বাংলাদেশে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ভারতের ‘ডাবল ভ্যারিয়েন্ট’ যেন দেশে না ঢুকে, সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই আগের তুলনায় করোনাভাইরাসে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে আফ্রিকার ধরন মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এই ধরনে সংক্রমণ ছড়ানোর মাত্রা বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ‘ডাবল ভ্যারিয়েন্টে’ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। ভারতের এই ধরনে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আগের তুলনায় বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে, ভারতের ‘ডাবল ভ্যারিয়েন্ট’ যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। সেজন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগতদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। আর যদি বাংলাদেশে প্রবেশ করেই, তাহলে দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই ভারতের ‘ডাবল ভ্যারিয়েন্ট’ যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে সেজন্য এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ‘ডাবল মিউটেশনের’ কারণে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। টিকা তখন কাজ করে না। তবে ভারতের গবেষকরা এও বলছেন, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্টের’ সংক্রমণ প্রবণতা বা রোগের তীব্রতা সৃষ্টির প্রবণতা নিয়ে বলার মতো তথ্য এখনও অজানা।
টিআই/এসএসএইচ