আগুনের ঘটনায় এখনো প্রাণহীন বেইলি রোডের ইফতার বাজার
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনার প্রায় এক মাস ছুঁইছুঁই। তবুও সেই রেশ যেন এখনো রয়ে গেছে। ভয়াবহ এ ঘটনার পর থেকে আলোক ঝলমলে বেইলি রোড এখনও অনেকটাই নিষ্প্রাণ। যার প্রভাব পড়ছে এখানকার বিখ্যাত ইফতার বাজারে। রমজানের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রাণ ফিরে পায়নি এখানকার ইফতার বাজার।
প্রতি রমজানেই বেইলি রোডের ইফতার বাজার বেশ আলোচনায় থাকে। স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এখানে আসেন বাহারি সব ইফতার আইটেমের স্বাদ গ্রহণ করতে। তবে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রিন কোজি ভবনে লাগা আগুন সেই ধারাবাহিকতার ছন্দপতন ঘটিয়েছে। আগুন আতঙ্কে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বেইলি রোডে কেউ পা মাড়াচ্ছেন না। যার প্রমাণ দেখা মেলে এখানকার ইফতার আইটেমের দোকানগুলোতে।
রোববার (২৪ মার্চ) সরেজমিনে বেইলি রোডের ইফতার বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকটাই ক্রেতাশূন্য প্রতিটি দোকান। যারা আসছেন, বেশিরভাগই স্থানীয় ও আশপাশের বাসিন্দা। কোনো দোকানে বা রেস্টুরেন্টে বসে ইফতার করার আগ্রহ দেখা যায়নি কারোর মধ্যে।
বেইলি রোডের অন্যতম বড় ইফতারের দোকান হলো ক্যাপিটাল ইফতার বাজার। সেখানে গেলে দেখা যায়, ক্রেতার পরিমাণ যৎসামান্য। অধিকাংশ দোকানে ক্রেতাই নেই। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগুনের ঘটনায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ইফতারের বাজারে।
ক্যাপিটাল ইফতার বাজারের ম্যানেজার আবদুল আজিজ বলেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার ইফতার আইটেম কেনা-বেচা খুবই কম। আগে তো দম ফেলার সময় থাকতো না। আর এবার কাস্টমারই নেই। রোজার বেশ কয়েকটি দিন কেটে গেলেও বেচাকেনার উন্নতি হয়নি।
তিনি বলেন, আগুনের ঘটনার পরই মূলত ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। আগে বেইলি রোড ছাড়াও অন্যান্য এলাকা থেকে মানুষ ইফতার করতে এখানে আসতেন। আগুন আতঙ্কে তারা কেউই আর এদিকে আসছেন না। এখন আশা করছি হয়তো সামনের রোজায় একটু বেচাকেনা বাড়বে।
একই রকম বক্তব্য ব্রাঞ্চ এট বেইলি কর্তৃপক্ষেরও। আগুন লাগা ভবনটির পাশেই অবস্থিত এই দোকান। রোজার প্রথম থেকে তারা ইফতার আইটেম বিক্রি শুরু করলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ ক্রেতা মেলেনি। বাধ্য হয়ে তারা কমিয়ে দিয়েছেন ইফতারের আইটেমও।
ব্রাঞ্চ এট বেইলির কর্মকর্তা মো. সজীব ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এবার আমাদের বিক্রি খুবই কম। আগে যেখানে প্রতিদিন বিক্রি হতো এক লাখের মতো, সেখানে এখন ৫০ হাজার বিক্রি হতেও কষ্ট হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আমরা আইটেমও কমিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ক্রেতা না থাকলে তো আইটেম কমিয়ে বা বাড়িয়েও কোনো লাভ নেই। আগুনের ঘটনার পর থেকেই মানুষ আর এদিকে ইফতার বা অন্যান্য খাওয়াদাওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে করে আমরা বিপাকে পড়েছি।
বেইলি রোডের আরেক জনপ্রিয় ইফতারের দোকান জাগেরি ইফতার বাজার। সেখানকার চিত্রও অন্যান্য ইফতার আইটেমের দোকানের মতোই। হাঁকডাক করেও ক্রেতার দেখা পাচ্ছে না দোকানটি।
সেখানকার কর্মচারী মোহাম্মদ হান্নান বলেন, এবারে আগের মতো ইফতার আইটেম বিক্রি হচ্ছে না। কাস্টমারের পরিমাণ কম। যারা আসছেন সবাই আশপাশের লোকজন।
ক্রেতার কমে যাওয়ার কারণ কী, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষের মনে তো একটা আতঙ্ক আছেই। চাইলেও অনেকে আগুনের ভয়ে এদিকে আসছেন না।
অন্যদিকে, ইফতার আইটেম বিক্রির জন্য সুপরিচিত আরেক দোকান নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টকে বন্ধ দেখা গেছে। গত ৫ মার্চ এক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ওএফএ/কেএ